সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা: জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ে হত্যা এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের কারণে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বুথিডাং এবং মংডু শহরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কয়েক হাজার বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আনুমানিক ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নাফ নদীর একটি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। যেখানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার বাংলাদেশ ও অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের কার্যকর সুরক্ষা দেওয়া হয়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংহতি নিশ্চিত করার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী, স্যাটেলাইট ছবি এবং অনলাইন ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, বুথিডাং শহরটি ব্যাপকভাবে জ্বালায়ে দেওয়া হয়েছে। শহর থেকে সামরিক বাহিনীর পশ্চাদপসরণ করার এবং আরাকান আর্মি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করার দুই দিন পরে গত ১৭ মে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে এর জন্য কোন পক্ষ দায়ী সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পায়নি জাতিসংঘ।

এক ব্যক্তি শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক ডজন মৃতদেহ পড়ে থাকে দেখেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। আরেকজন বলেছেন, তিনি হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার একটি দলের সঙ্গে ছিলেন। তারা বুথিডাং থেকে মংডু শহরের পশ্চিমে সংযোগকারী রাস্তায় আরাকান আর্মি হাতে অবরুদ্ধ হয়েছিল।

ওই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন, আরাকান আর্মি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে। শহরের প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রোহিঙ্গা গ্রামে যাওয়ার পথে তারা আরাকান আর্মির নিপীড়নের শিকার হন। গ্রামে গ্রামের হামলার কারণে আগেই সেখানকার রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, সেখানেই তারা আশ্রয়ে জন্য যাচ্ছিল। এই অঞ্চলে রোহিঙ্গারা কয়েক সপ্তাহ ধরে অপরিচিত অসংখ্য পরিবারের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছে, যেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই।

বুথিডাং পুড়িয়ে দেওয়ার কয়েক সপ্তাহে আগে থেকেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় উত্তর রাখাইন রাজ্যে আরাকান বাহিনী এবং সামরিক বাহিনী উভয়ের দ্বারা রোহিঙ্গা বেসামরিকদের ওপর নতুন করে হামলার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। বিমান হামলার পাশাপাশি, চালকবিহীন আকাশযান দিয়ে নিরস্ত্র পলায়নরত গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালানো, শিরশ্ছেদ, গুম, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। তারা সক্রিয়ভাবে নিষ্ঠুর ও বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ আরোপ করে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অসম্ভব করে তুলেছে।

জাতিসংঘের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সহিংসতার গুরুতর সম্প্রসারণের স্পষ্ট এবং বর্তমান ঝুঁকি তারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। কারণ প্রতিবেশী মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ দখল নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেখানে সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকটি ফাঁড়ি রয়েছে এবং একটি বৃহৎ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এরই মধ্যে শত শত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নিরাপত্তার জন্য গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করা এবং জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য ছাড়াই সব বেসামরিক নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অবিলম্বে এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক ত্রাণ প্রবাহের অনুমতি দেওয়া এবং সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্তভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এরই মধ্যে আদেশ দিয়েছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)