আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩ পদে ১৩ প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন
জি এম মুজিবুর রহমানঃ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামীকাল ২১ মে (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আশাশুনি উপজেলায় ৩টি পদে ১৩ প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গতকাল প্রচার প্রচারনার শেষ দিনে সকল চেয়ারম্যান প্রার্থী একাধিক করে বিশাল সমাবেশ বা পথ সভা করে শক্তি ও সমর্থক প্রদর্শন করতে চেষ্টা করেন।উপজেলান ১১ ইউনিয়নে ৮৭ ভোটকেন্দ্রের ৬০৪টি ভোটকক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহনের জন্য প্রশাসন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলার ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ২১০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটারের মধ্যে ১,২১,৯৭৯ জন পুরুষ, ১,১৭,২৩০ জন নারী ও ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ প্রার্থী অংশগ্রহন করেছেন। যার মধ্যে চেয়াম্যান পদে ৩জন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবিএম মোস্তাকিম (চিংড়ী মাছ প্রতীক), উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু (আনারস প্রতীক), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম (ঘোড়া প্রতীক) এবং শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ (দোয়াত কলম প্রতীক)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী (টিউবওয়েল প্রতীক), আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি জিএম আল ফারুক (টিয়া পাখি প্রতীক), উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এনএমবি রাশেদ সারোয়ার শেলী (চশমা প্রতীক), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসমাউল হোসাইন (মাইক প্রতীক) ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি এস এম সাহেব আলী (তালা প্রতীক) নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসলেমা খাতুন মিলি (কলস প্রতীক), জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সীমা পারভীন (হাঁস প্রতীক), জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মেহেরুন্নেছা (ফুটবল প্রতীক) ও আশাশুনি সদর ইউপি সংরক্ষিত নারী সদস্য মারুফা খাতুন (বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক)।প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট এবং দোয়া চেয়ে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠক এবং নির্বাচনী সভা করে চলেছেন। উপজেলার বিভিন্ন চায়ের স্টল, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় আর রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে মুখে চলছে নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা। কর্মী সমর্থকদের মাঝে বাক যুদ্ধ বা সোস্যাল মিডিয়ায় একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা নিক্ষেপের ঘটনা নিত্য ঘটে চলেছে। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা তিনজন ও স্বতন্ত্র এক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।
বিগত ৩টি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম। ৩য়বার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। প্রথমবার সাধারণ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তী দু’বার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীক নিয়ে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন মাঠে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাতক্ষীরায় গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আইনজীবী। অপরদিকে, এবারের উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চমক দেখানোর প্রত্যাশা তার নেতাকর্মীদের। দলীয় কোনো ব্যানার, পদপদবি বা প্রতীকের ব্যবহার না থাকলেও সরকার দলীয় দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম এবং তাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে একধরনের স্নায়ু যুদ্ধ। এনিয়ে ভোটারদের মধ্যে অজানা শঙ্কা বিরাজ করছে। অন্য দিকে আনারস প্রতীকের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু ২৪টি কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়াও প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, কাদাকাটি, কুল্যা ও বুধহাটা ইউনিয়নে অনেক কেন্দ্র দখল করে ভোট কেটে নেওয়ার আশঙ্কা করছেন সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম। পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা নীরবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। তবে সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এখন দেখার বিষয় আগামী ২১ মে (মঙ্গলবার) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন শেষে তিন পদের বিপরীতে কোন তিন প্রার্থী বিজয়ের শেষ হাসিটা হাসতে পারেন।