ভূয়া সনদে দুই যুগ ধরে চাকরি

স্টাফ রিপোর্টার ঃভুয়া সনদে সাতক্ষীরা সদরের নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের (ইন—১১৮৮০৯) প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজীর (ইনডেক্র— ৫১৫১০০) চাকরি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও বহাল তবিয়তে তার কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। তদন্তে বেরিয়ে এলো প্রায় দুই যুগ ধরে শিক্ষা কর্মকর্তাদের বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে অর্থ লুটপাটের কর্মকান্ড। ইতিমধ্যে তিনি গড়ে তুলেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। রাম রাজত্ব,অর্থ লুটপাট,ইচ্ছামত কমিটি তৈরীসহ নানা অপকর্মে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তারই সহকর্মী উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মালেক গাজীর নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে যশোর বোর্ডে অভিযোগ করেন। তারই ভিত্তিতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব দেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার দাশকে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে তিনি প্রতিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৯৯ সালের জুনে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভুয়া কম্পিউটার সনদ ও স্নাতক ৩য় শ্রেনীর গোপন রেখে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) হিসেবে যোগদান করেন মালেক গাজী। ওই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালার জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী প্রার্থীকে এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক শ্রেণিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাস থাকতে হবে। কিন্তু সে সময় তিনি বেসরকারী অনুমোদহীন প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া কম্পিউটার সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন। এছাড়া তার স্নাতক ডিগ্রীও ছিল ৩য় শ্রেনীর। সব কিছু গোপন রেখে শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের চোখে ধুলা ছিটিয়ে ধূর্ত মালেক গাজী সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগে পাশ উল্লেখ করে ২ হাজার ৫৫০ টাকার স্কেলের পরিবর্তে ৩ হাজার ৪০০ টাকার স্কেলে বেতন ভাতা গ্রহন করেছেন।দেখা গেছে, প্রতিটি শিক্ষকের ক্ষেত্রে নিয়োগের পর, আবেদন সাপেক্ষে বিষয় অনুমোদন ও এমপিওভুক্তির আইন আছে। কিন্তু ২০০১ সালের ২০ নভেম্বর কারিমা স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার বিষয় খোলার আবেদন করেন। ২০০২ সালের ৩১ জুলাই যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের উপ—পরিচালক নবম ও দশম শ্রেণিতে কম্পিউটার বিষয় খোলার অনুমতি সাক্ষর করেন। মজার ব্যপার হলো : বিষয় অনুমোদন হওয়ার আগে সুচতুর মালেক গাজী নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এমপিওভুক্ত হন। কম্পিটার বিভাগ খোলার আগে তিনি কীভাবে এমপিওভুক্ত হলেন? শিক্ষা—অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই সুশিল সমাজের মানুষ।আরো দেখা গেছে, সকল অপকর্মের হোতা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে (তার সকল ভুয়া শিক্ষা সনদ ধামা চাঁপা দিয়ে) সাতক্ষীরা সদরের নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে জনবল কাঠামোর শর্তানুযায়ী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি) থেকে বিএড সনদ অর্জন করা বাধ্যতামুলক ছিল। কিন্তু তিনি সব নিয়ম অবমাননা করে “ রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা”থেকে ভুয়া বি এড সনদ দাখিল করেন। সে সনদে রোল, রেজি: ও সিরিয়াল নং খুজে পাওয়া যায়নি। যেটি তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিয়মান হয়েছে।২০১৪ সালের জুনে নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়টি সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) থেকে ১ লাখ টাকা উদ্দীপনা পুরস্কার পায়। সেই টাকা সেকায়েপ নীতিমালার শর্তভেঙ্গে আত্নসাৎ করে ২০২১ সালের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় দেখিয়ে কমিটির এক সভায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোন কাজে এ অর্থ ব্যয় হয়েছে তদন্তের সময় তা উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধান শিক্ষক। উক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পরে কোনো অর্থ কমিটি করেননি সুকৌশলি মালেক গাজী। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের আয়— ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই বলে অভিযোগ করেন (তদন্তের সময়) শিক্ষকরা।
সরকারি কোনো নিয়ম—নীতির তোয়াক্কা নাকরে (২০২২ সালে কমিটির সিদ্ধান্তে) অর্থলোভী মালেক গাজী (অতিরিক্ত) প্রতি শ্রেণিতে দুইটি বাড়তি শাখা খুলে ও ২৫ জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করে নিয়োমিত শিক্ষকদের অবমাননা করে পাঠদান করাচ্ছেন। যার কোন অনুমোদন নেই। তাছাড় অর্থ লুটপাটের জন্য খণ্ডকালীন ২৫ জন শিক্ষক দিয়ে সকাল ৮টা থেকে ৯.৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্কুলের মধ্যে চলে কোচিং বানিজ্য। বাধ্যতামুলক প্রায় ৩ শতাধিক ছাত্রীদের কোচিং করতে হয়। এবং ফি বাবদ মাসে জনপ্রতি ৬ থেকে ৭ শ টাকা শিক্ষাদশ্যু মালেক গাজীকে দিতে হয়। যার পরিমান প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা। যা সরকারের কোন অনুমোদন নেই।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু, বেপরোয়া মালেক গাজী বহাল তবিয়তে চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন। বেতন—ভাতাও তুলছেন।এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজী বলেন,ভাই আপনার সাথে আমার কোন ঝগড়া নেই।ভাল সম্পর্ক আছে। কোন কিছু জানা লাগবে না। দেখা হলে ঠিক হয়ে যাবে। স্কুলের অর্থ লুটপাট,জাল সার্টিফিকেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ভাই কিছু শোনা লাগবেনা। দেখা হলে ঠিক হয়ে যাবে।এ ব্যাপারে যশোর বোর্ডর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো: আহসান হবিব বলেন,এধরনের ঘুর্নিত কর্ম করলে প্রথমে বেতন বন্ধ,পরে কমিটিকে চিঠি দিবো তার সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য। এবং পরে আমরা তাকে স্থায়ী বরখাস্ত করবো। বেতন—ভাতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার চাকুরি জীবনের সমগ্র বেতন—ভাতা ফেরৎ পূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)