আনোয়ার হোসেনকে প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আশাশুনিতে মানববন্ধন

আশাশুনি প্রতিনিধি:
শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে তার নিজ উপজেলা আশাশুনিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠান হয়েছে। শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বুধহাটা আশাশুনি সড়কে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় । আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সচ্চিদানন্দ দে সদয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস কে হাসান ও শিক্ষক হাসান ইকবাল মামুনের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন আশাশুনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলো নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপ্পী,আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হোসেনুজ্জামান,
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর, সাংবাদিক মাহমুদ হাসান, সাবেক ইউপি সদস্য রেজওয়ান আলী, বিশিষ্ট সমাজসেবক গৌতম ব্যানার্জি প্রমূখ।

বক্তারা বলেন, শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন সাতক্ষীরা জেলার কৃতি সন্তান। তিনি আমাদের এলাকার গর্ব। তিনি ভাষা আন্দোলনে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অথচ দুঃখজনক বিষয় ৭৪ বছরেও তার কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি। আনোয়ার হোসেন ছিলেন গরিব বাবা-মায়ের মেধাবী সন্তান, তার রক্তে আজকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সূচনা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামে ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আনোয়ার হোসেন বাড়ি সংলগ্ন বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। এর পর বুধহাটা বি.বি.এম কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার একপর্যায়ে তিনি খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৪৬ সালে এসএসসি পাস করেন। তিনি খুলনার বিএল কলেজে পড়াশুনাকালীন ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। তরুণ আনোয়ার হোসেন ভাষা আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুলনার তৎকালিন গান্ধী পার্কে (বর্তমানে হাদিস পার্ক) ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ইস্তেহার পাঠ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকদিন পর তিনি মুক্তি পান। পরে ভাষা আন্দোলনের মিছিল থেকে ১৯৪৯ সালে পুলিশ তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে প্রথমে তাকে কোতয়ালী থানায় রাখা হয়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী কারাগারে।

সেখানে পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন তিনি। একপর্যায়ে ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলে খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালানো হয়। তাতে সাতজন কারাবন্দি নিহত হন। তার মধ্যে ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন অন্যতম।
আমরা বিশ্বাস করি মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন দেশের প্রথম শহীদ। আজকের প্রতিবছরের ২৪ এপ্রিল খাপড়া ওয়ার্ড দিবস পালিত হলেও আনোয়ার হোসেনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
তাই আমাদের দাবি শহীদ আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান।
বক্তারা আরো বলেন সাতক্ষীরা জেলা সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আনোয়ার হোসেনের নামে সরকারিভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও প্রতিষ্ঠান শহীদ আনোয়ার হোসেনের নামে নামকরণ, অবিলম্বে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মরণোত্তর একুশে পদক্ষে ভূষিত করার দাবি জানন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)