ধুলিহর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার রাস্তার ইট বিক্রির অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে
স্টাফ রিপোর্টার:
ধুলিহর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার রাস্তার ইট বিক্রির অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
তথ্য অনুসন্ধানে গেলে সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে ভিডিও মুছে দিলেন চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীরা
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার রাস্তার ইট তুলে নিয়ে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অর্ধশতাধিক জনবল নিয়ে ইউনিয়নের শালিখেডাঙা-কুলপোতা আঞ্চলিক সড়কে এলজিডির অর্থায়নে নির্মিত ওই সড়কের ইট তুলে নিয়ে বিক্রি করতে থাকেন তিনি। খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে যেয়ে স্থির ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করলে সাংবাদিকের অবরুদ্ধ করে রাখেন চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী। এসময় সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি ও জাতীয় দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকিরের ফোন কেড়ে নিয়ে স্থির ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দেন তারা।
জানা যায়, ২০১৭ সালে এলজিইডির অর্থায়নে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে বেদনা নদীর তীর ঘষা ধুলিহর ইউনিয়নের শালিখেডাঙা-কুলপোতা সড়ক নির্মাণ করা হয়। এবং সড়কের শালিখেডাঙা নামক স্থানে বেদনা নদীর ধারের খাস জমিতে মুজিব বর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করেন। তবে ক্ষমতার বলে ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী নিজের সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে ওই সড়কের ইট তুলে নিয়ে বিক্রি করতে থাকেন। কেন বা কিসের জন্য এই ইট তুলে নিয়ে বিক্রি করছেন চেয়ারম্যান? সেব্যাপারে কোনকিছু জানেননা স্থানীয়রা।
সরেজমিনে শালিখেডাঙা-কুলপোতার ওই সড়কে যেয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক শ্রমিক তড়িঘড়ি করে সরকারি রাস্তার ইট তুলছেন। আর এদের অনেকে ইট একটি লড়িতে করে বেতনা নদীর তীরে নিয়ে যাচ্ছেন। আর সেখান থেকে ভালো ইটগুলো ট্রলি প্রতি গুণে বিক্রি করছেন চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী লোকজন।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকির বলেন, সাবেক উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার ভাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী তার ইউনিয়নে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। তার ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে পারেননা স্থানীয়রা। এমনকী স্থানীয় সাংবাদিকদেরও জিম্মি করে রেখেছেন তিনি।
তবে স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার শালিখেডাঙা নামক স্থানের আশ্রয়ণ প্রকল্পের এলাকাতে যেয়ে দেখা যায় ওই সড়কের ইট তুলে নিয়ে অন্যত্র নেয়া হচ্ছে। এসময় ইট তোলার কাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিক বলেন মাথাপিছু ৫০০ টাকা চুক্তিতে দিনপ্রতি কাজ করছেন তারা। চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী তাদেরকে নিয়োজিত করেছেন। তবে কিসের জন্য ইট তোলা হচ্ছে সেব্যাপারে কোনকিছু জানেননা বলে জানান তারা।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরও বলেন, বিষয়টা সন্দেহজনক হলে আমি আরও সামনে অগ্রসর হয়। তখন আমার চারপাশে চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরীর লোকজন মহড়া দিতে থাকে। তবে তাদের কর্মকান্ডে আমি ভীতিসঞ্চার না হয়ে বরং আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে থাকি। একপর্যায়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার পর লক্ষ্য করি যেখানে ইটগুলো ফেলানো হচ্ছে সেখানে চেয়ারম্যানের একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়োজিত। যারা ইট গুণে ট্রলিতে উঠিয়ে দিচ্ছেন। এসময় আমি সকল ঘটনা আমার মুঠোফোনে রেকর্ড করাসহ একাধিক ছবি উঠিয়ে রাখি। তবে ওইসময় ধুলিহর ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রশিদ গাজীর ছেলে আব্দুর রহিম বাবু আমার পথ আটকান। এবং আমার মুঠোফোন কেড়ে নেন। আর কোনকিছু বুঝে ওঠার আগে আব্দুর রহমান বাবুর কথামতো চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে ঘিরে ধরেন।
এসময় আব্দুর রহমান বাবু আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনি এখানে কেন এসেছেন? আপনার সাহস কীভাবে হয় ছবি তোলা কিংবা ভিডিও করার? আপনি কী অনুমতি নিছেন? আপনি কী জানেননা এটা চেয়ারম্যানের কাজ। তার ভাই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। আপনার কী প্রাণের ভয় নেই? সহ বিভিন্ন ধরণের উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন। এসময় তিনি আমার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে সবকিছু ডিলিট করে দেন।
সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকির অভিযোগ করে বলেন, সবকিছু চেয়ারম্যানের কথামতো ঘটেছে। কেননা, তারা আমাকে মুঠোফোনে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলিয়েছিল। আমি চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। তিনি পরিষদে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে আমার কাছে এঘটনার যেন কোন ডকুমেন্ট বা প্রমাণ না থাকে সেজন্য চেয়ারম্যানের কথামতো তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ও ছবি মুছে দেন বলে জানান তিনি।
সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকির আরও বলেন, বিষয়টা আমি সাংবাদিক নেতাদের অবগত করেছি। এছাড়া ঘটনাস্থলে আসার আগে এলজিইডির দায়িত্বরত কর্মকর্তাকেও অবগত করেছিলাম। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে দিতে বলেছিলেন। তবে তার আগে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে অবরুদ্ধ করে ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী জানান, বিষয়টা সম্পর্কে কোনকিছু জানতেন না তারা। কেন বা কিসের জন্য রাস্তার ইট তোলা হচ্ছে সেব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদেরকে অবগত করেননি। তাছাড়া আমাদের জানামতে ওই ইউনিয়নে এমন কোন প্রকল্প নেই যার জন্য রাস্তার ইট তুলতে হবে। আর সবকিছুর একটা নিয়ম আছে।
তিনি বলেন, ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা দুপুরের দিকে অবগত হয়। আমি তাকে বলেছিলাম বিষয়টা পুরো খোজঁখবর নিয়ে আমাকে জানাতে। তবে পেশাগত কাজে গেলে সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলার যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা একদমও ঠিক হয়নি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকেরা সমাজের দর্পণ। এধরনের ঘটনা কোন জনপ্রতিনিধির থেকে আমরা কাম্য করিনা। উপজেলা প্রশাসন তার জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।