ঘরপোড়া আগুনে জ্বলছে পশ্চিম তীরও
অনলাইন ডেস্ক :
শুধু গাজা নয়, ঘরপোড়া আগুনে জ্বলছে পশ্চিম তীরও। অঞ্চলটির ঘরে ঘরে এখন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার আতঙ্ক। ফিলিস্তিনিদের বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলছে তারা। ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে ১৭১ বার।
প্রাণহানির ঘটনা ঘটিয়েছে ২৬টি। সম্পত্তির ক্ষতি করেছে এমন ঘটনা ঘটেছে ১১৫টি। বসতি স্থাপনকারীরা প্রাণহানিসহ সম্পত্তিরও ক্ষতি করেছে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে ৩০টি। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর বসতি স্থাপনকারীদের করা বিভিন্ন আক্রমণ নথিভুক্ত করেছে তারা।
ক্ষতি বা ধ্বংস হয়েছে ২৪টি আবাসিক কাঠামো, ৪০টি কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত কাঠামো, ৬৭টি যানবাহন ও ৪০০টিরও বেশি গাছ ও চারা। পশ্চিম তীরের আরেক অঞ্চল আলগানুব। গত ৯ অক্টোবর এই অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন মোট ৪০ জন বাসিন্দা।
নিজেদের ভিটেবাড়ি ছেড়ে যেতে বন্দুক ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাদের। বলা হয়েছে, এক ঘণ্টার মধ্যে এই অঞ্চল ছেড়ে চলে না গেলে তাদের হত্যা করা হবে। বাস্তুচ্যুতদের একজন আবু জামাল (৭৫) বলেন, ‘বসতি স্থাপনকারীরা আমাদের তাঁবুতে আগুন দিয়েছে, আমার ছাগল চুরি করেছে। আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে।’
গত ১২ অক্টোবর পশ্চিম তীরের নাবলুস অঞ্চল থেকে আট পরিবারের মোট ৫১ জনকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। তাদেরও বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি আর রাতে তাঁবুতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ওসিএইচএ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের ২৮টি সম্প্রদায়ের ১ হাজার ১০৫ জন মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বাস্তুচ্যুত হয়েছে চারটি সম্প্রদায়। অন্য ছয়টি সম্প্রদায়ের ৫০ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২৫ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে সাতটি সম্প্রদায়ের।
২০২২ সাল থেকে বসতি স্থাপনকারীদের হামলার শিকার হয়ে মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৯৩৩তে পৌঁছেছে। এছাড়া ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বাড়িঘর ধ্বংসের শিকার হয়ে ২০২২ সালে আরও ১ হাজার ৩২ জন ফিলিস্তিনি ও ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫২ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত করা ছাড়াও ফিলিস্তিনের চলাফেরায় অবরোধসহ বিভিন্ন মানবিক পরিষেবা থেকে তাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন চলছে গ্রেফতার অভিযান। শুক্রবারও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে অন্তত ৪১ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। অভিযান চালানো হয়েছে পশ্চিম তীরের নাবলুস, তুলকারম ও রামাল্লায়। তবে বেশিরভাগই গ্রেফতার হয়েছেন হেব্রন থেকে। শহরটির দক্ষিণে আল-ফাওয়ার শরণার্থী শিবির থেকে কমপক্ষে ২৫ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।