যুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের গাজায় পাঠানোর হুমকি দিলেন ইসরায়েলি পুলিশ প্রধান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসরায়েলে যুদ্ধের বিরোধীতা করে বিক্ষোভে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের বাসে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি পুলিশ প্রধান। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দখলদার ইসরায়েল প্রতিদিনই গাজায় বোমাবর্ষণ করে চলেছে। ইসরায়েলের এই হামলায় নারী ও শিশুসহ এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে গাজার সমর্থনে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের পুলিশ প্রধান কোবি শাবতাই। এমনকি ইসরায়েলে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করলে বিক্ষোভকারীদের অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় পাঠানোর হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি পুলিশের টিকটক চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে শাবতাইয়ের এই মন্তব্যটি সামনে আসে। পরে গাজার সমর্থনে হাইফাতে আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পরে বুধবার ইসরায়েলি মিডিয়া শাবতাইয়ের এই মন্তব্যটি প্রকাশ করে।
পুলিশের টিকটক চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওতে ইসরায়েলি পুলিশ প্রধান কোবি শাবতাই বলেন, ‘যে কেউ ইসরায়েলি নাগরিক হতে চায়, (তাদের) স্বাগত জানাই। যে কেউ গাজার সাথে যুক্ত হতে চায়, তাকে স্বাগত জানাই। আমি তাকে এখন সেখানকার বাসে উঠিয়ে দেবো।’
সংক্ষিপ্ত ওই ভিডিওতে শাবতাই আরও বলেন, ‘যে কোনও উস্কানির ক্ষেত্রে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি থাকবে … (গাজার সমর্থনে) প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জন্য কোনও অনুমতি দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ইসরায়েল বর্তমানে ‘যুদ্ধের অবস্থায় রয়েছে … তাই আমরা এমন পরিস্থিতিতে নেই যেখানে আমরা সব ধরনের লোককে বাইরে বের হতে দেবো এবং আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ দেবো’।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র এলি লেভি বুধবার আর্মি রেডিওকে বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে ৬৩ জনকে ‘সন্ত্রাসে’ সমর্থন বা উস্কানি দেওয়ার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বুধবার ওয়াইনেট নিউজ সাইটকে বলেছেন, তারা ইসরায়েলে অবস্থানরত এমন সব ফিলিস্তিনিদের খুঁজে বের করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় নজর রাখছেন যারা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পরিচালনাকারী গোষ্ঠী হামাসের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছেন।
মূলত মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।
হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০৩ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া আরও ১৯৯ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
পরে হামাসের হামলার প্রতিশোধে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্ত প্রাচীরের কাছে অবস্থান নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শত শত ট্যাংক। গাজায় অব্যাহত বিমান হামলার মধ্যেই এসব ট্যাংক গাজার কাছে নিয়ে আসা শুরু হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে— যে কোনও সময় গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হতে পারে।
এছাড়া হামাসের হামলার প্রতিশোধে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধের ১৩তম দিনে বৃহস্পতিবার সকালেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে এবং এসব হামলায় ৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও অভিযানে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৪৭৮ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন আরও ১২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। হতাহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার এই তথ্য জানায়।