নগদ টাকা ছাড়াই যাওয়া যাবে ঢাকার যেকোনো প্রা‌ন্তে

ডেস্ক নিউজ:
পকেটে টাকা নেই? তা‌তে কি? বাসের ভাড়া পরিশোধ নিয়ে আর পোহাতে হবে না দুর্ভোগ। থাকবে না টিকিটের ঝামেলা কিংবা খুচরা টাকা নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা। এমনই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায়, যার নাম র‍্যাপিড পাস। কার্ডের মাধ্যমে বাসের ভাড়া পরিশোধ করে এ সুবিধা পাবেন রাজধানীবাসী।

‌বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো পুরো ঢাকা শহরের গণপরিবহনে শিগগিরই বাস্ত‌বায়ন করা হ‌চ্ছে এই র‌্যাপিড পাস। যারা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন তারা নিতে পারবেন এ সেবা। র‍্যাপিড পাস চালুর খবরে রাজধানীর বাসযাত্রীদের মাঝে বইছে স্বস্তির সুবাতাস। নগরবাসীর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, কবে চালু হবে র‍্যাপিড পাস?

এদিকে, র‍্যাপিড পাস নিয়ে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে সং‌শ্লিষ্ট কর্তৃপ‌ক্ষও। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআর‌টি‌সি) প‌রিচালক এস এম কমরুজ্জামান ডেইলি বাংলা‌দেশ‌কে বলেন, বর্তমানে ঢাকা মেট্রোরেলের যাত্রীরা র‌্যা‌পিড পাস ব্যবহার করছেন। চল‌তি মা‌স থে‌কেই বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) এবং বিআরটিসি বাসের জন্যও র‍্যাপিড পাস চালু হবে। এরপর ধাপে ধা‌পে অন্যান‌্য গণপরিবহনেও যুক্ত হবে র‍্যাপিড পাস।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত স‌চিব মো. জাকির হোসেন বলেন, সব পরিবহনের জন্য একটাই র‍্যাপিড পাস কার্ড ব্যবহার করা হবে। এ সুবিধা চালুর মূল উদ্দেশ্য ক্যাশলেস লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি, জনগণের সময় বাঁচানো, ঝামালামুক্ত ভ্রমণ নিশ্চিত করা, গণপরিবহণে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, সরকারের রাজস্ব বৃ‌দ্ধি করা।

তি‌নি আরো ব‌লেন, মেট্রোরেল ও বিআরটিতে র‌্যাপিড পাস পাইলটিং করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনসহ অন্যান্য খাতে চালু করা হবে। বেসরকারি পরিবহনকেও র‍্যাপিড পাসের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে র‍্যাপিড পাস নিয়ে প্রকা‌শিত গণবিজ্ঞপ্তি‌তে বলা হ‌য়ে‌ছে, গণপরিবহনে সমন্বিত ই-টিকেটিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ভাড়া আদায় সহজতর ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে বর্তমা‌নে মেট্রোরেলে র‌্যাপিড পাস ব্যবহার করে ভাড়া প‌রি‌শোধ করা যা‌চ্ছে। ভবিষ্যতে মাত্র একটি র‌্যাপিড পাস ব্যবহার করে সবই গণপরিবহনসহ অন‌্যান‌্য খা‌তের বিলও প‌রি‌শোধ করা যাবে।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কর্তৃপক্ষ বল‌ছে, র‌্যাপিড পাসের সু‌বিধা নগরবাসীর দৈনন্দিন যাতায়াতকে সহজ করে তুলবে। এটি বাস, ট্রেন, ফেরি, লঞ্চ, সিএনজি প্রভৃতি যানবাহনের ভাড়া পরিশোধ, পার্কিং ফি এবং টোল পরিশোধে ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ থাকবে। এ কারণেই র‌্যাপিড পাস প্রকল্পের স্লোগান হল- সবার জন্য একটি কার্ড।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূ‌ত্রে জানা গেছে, র‌্যাপিড পাস মেশিনে স্পর্শ করলেই ভাড়া পরিশোধ হয়ে যাবে। সময়মতো কার্ড রিচার্জ করারও ব্যবস্থা রয়েছে। কার্ডে টাকা না থাকলেও একবার ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যাবে। রিচার্জের পর বকেয়া টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেয়া হবে। বর্তমা‌নে উত্তরা থে‌কে আগারগাঁও পর্যন্ত মে‌ট্রো‌রে‌লে এ সেবা‌ চলমান। এখন শুধু সব গণপ‌রিবহ‌নে র‌্যাপিড পাস চালুর অপেক্ষা।

এ সেবা সম্পর্কে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ডেইলি বাংলা‌দেশ‌কে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা চালু রয়েছে। আমরাও চাই আমাদের দেশে পরিবহন সেবায় পরিবর্তন আসুক। কিন্তু তা বাস্তবায়‌নে প্রথ‌মে পু‌রো পরিবহন সেক্টরকে একই কাঠামোতে আনতে হ‌বে। এ‌তে পরিবহন সেবার মান বাড়বে, সবাই উপকৃত হবে।

ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন ব্যবস্থায় সমন্বিত ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালুর লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সরকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। সেই প্রকল্পের আওতায় র‌্যাপিড পাস সেবা চালু করা হয়। র‌্যা‌পিড পাস প্রকল্প আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হ‌য়ে‌ছে ৮৩ কোটি টাকা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, র‍্যাপিড পাস গ্রহণকারী বাস পরিষেবাগুলোতে কার্ড রিডার ইনস্টল করা থাক‌বে। চালকের পাশে একটি যন্ত্র বসানো থাক‌বে। যাত্রী বাসে ওঠা ও নামার সময় ডিভাইসে কার্ডটি প্রবেশ করাবেন। এরপর মেশিনটি ভ্রমণের দূরত্ব গণনা করে কার্ড থেকে উপযুক্ত ভাড়া কেটে নেবে এবং যাত্রীর র‍্যাপিড পাসের বর্তমান ব্যালেন্স উল্লেখ করে একটি রসিদ প্রিন্ট করে দেবে।

আরো জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ভাড়া ধরেই র‍্যাপিড পাস সফটওয়্যারে নির্দিষ্ট দূরত্ব ইনস্টল করা আছে। এ কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়ার সুযোগ নেই। যাত্রীর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সু‌যোগ নেই।

যেভা‌বে সক্রিয় হ‌বে র‌্যাপিড পাস
কার্ডটি সক্রিয় করতে একজন ব্যবহারকারীকে তার নাম এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া করতে দুই কার্যদিবস সময় লাগে। যাত্রীরা হারানো বা ক্ষতিগ্রস্ত কার্ডের জন্যও আবেদন করতে পারবেন।

র‌্যাপিড পাস যেখান থেকে ক্রয় ও রিচার্জ করা যা‌বে
উত্তরা হাউজ বিল্ডিং, বনানী, শাহবাগ এবং মতিঝিল বিআরটিসি কাউন্টারের পাশাপাশি ঢাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের শাখাতে নির্ধারিত বাস স্টপেজে র‌্যাপিড পাস ক্রয় এবং রিচার্জ করা যাবে। কার্ডের দাম ৪০০ টাকা, এর মধ্যে সিকিউরিটি ডিপোজিট ২০০ টাকা ও বাকিটা ব্যালেন্স হিসেবে অ্যাকাউন্টে থাকবে। কার্ড রিচার্জ করার জন্য যাত্রীরা বিআরটিসি কাউন্টারে টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) বুথ এবং মতিঝিল, এলিফ্যান্ট রোড, বনানী, উত্তরা এবং সোনারগাঁও জনপথের ডিবিবিএল শাখায় যেতে পারবেন। একজন যাত্রী সর্বনিম্ন টাকা ১০০ এবং সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা দিয়ে কার্ডটি রিচার্জ করতে পারবেন। একটি রিচার্জ ১০০০ টাকার বেশি হবে না। মোট ব্যালেন্স ২০০০ টাকার বেশি হবে না।

র‍্যাপিড পাসে থাক‌ছে আরো নানা সু‌বিধা
র‌্যাপিড পাসে অপর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকা সত্ত্বেও একটি কার্ড চার্জ করা যা‌বে এবং এটি রিচার্জ করার পর ব্যালেন্স সমন্বয় করা হবে। কার্ড হারিয়ে গেলে, চুরি হলে বা নষ্ট হলে যাত্রী টিওএম বুথে নতুন কার্ডের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন। তার নিবন্ধনের তথ্য প্রদান করে পুরনো কার্ডের ব্যালেন্স নতুন কার্ডে স্থানান্তর করতে পারবেন। যাত্রী তার কার্ড বাতিল করতে চাইলেও টিওএমবুথে কার্ডটি জমা দিয়ে অবশিষ্ট ব্যালেন্সের টাকা ফেরত নিতে পার‌বেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)