সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আসামী আশরাফুলকে মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ
রঘুনাথ খাঁ:
তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ হাসানকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মদ আব্দুল আলীম আল রাজী সোমবার দুপুর একটা ২০ মিনিটে এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীর নাম আশরাফুল ইসলাম (৩৮)। সে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সুভাষিনী গ্রামের আব্দুল জলিল সরদার ওরফে ডাবলুর ছেলে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, আসামী আশরাফুল ইসলাম সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের জিয়াউর রহমানের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। জিয়াউর রহমান তার প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কৌশলে সে ওই পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জিয়াউর রহমানের ছেলে ও কদমতলা কিন্ডার গার্ডেনের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ হোসেনকে বাড়ির সামনে রাস্তায় খেলা করার সময় আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন মটর সাইকেলে ঘুরানোর নাম করে রিয়াদকে তুলে নিয়ে যায়। সারা রাত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি । আশরাফুল ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মর্মে জানা যায়। পরদিন সকালে রিয়াদকে বলাডাঙা ফুটবল মাঠ সংলগ্ন দীঘির পাড়ে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকার খবর পেয়ে সেখানে ছুঁটে জান জিয়াউর রহমান। তার মাতায় গুলিসহ মাথায় ও বুকে কয়েকটি ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। এ ঘটনায় নিহতের পিতা জিয়াউর রহমান বাদি হয়ে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় আশরাফুলসহ অজ্ঞাতনামা ছয় জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ২০১৬ সালের ২১ জুলাই আশরাফুলের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তবে আসামী তদন্ত ও মামলা বিচারাধীন থাকাকালিন সময়ে গ্রেপ্তার হননি।
মামলার নথি, ১৪ জন সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দি শেষে আসামী আশরাফুলের বিরুদ্ধে রিয়াদকে অপহরণ ও গুলি এবং নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক চাঁদ মোহাম্মদ আব্দুল আলীম আল রাজী তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। তবে আসামী পলাতক থাকায় আদালতের কাঠগোড়ায় ছিল না।
আসামীপক্ষে (স্টেট ডিফেন্স) মামলাটি পরিচালনা করেনে অ্যাড. রোকনুজ্জামান।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ।
আদালতের আদেশ শুনে মামলার বাদি জিয়াউর রহমান বলেন, এ রায়ে তিনি খুশী। তবে আসামীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তিনি র্যাব ও পুলিশসহ সকল আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যদের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রিয়াদকে হত্যার ঘটনায় ২০১৪ সালে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা এলে নিহতের বাবাকে সাত লাখ টাকা অর্থ সহায়তা ও সরকারি অর্থায়নে ঘর নির্মাণ করে দেন।