ভারত-শ্রীলংকা মহারণ: দুই দলই এগিয়ে যেখানে
স্পোর্টস ডেস্ক:
আজ রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) ১৬তম এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ভারত ও শ্রীলংকা। এবারের আসরের ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে রোহিত শর্মার দল। তবে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ৮-এ থাকা লংকানরাও যে ছেড়ে কথা বলবে না- সেটা বলাই যায়।
চলতি আসরের সুপার ফোর পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও শ্রীলংকা। যেখানে ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে দাসুন শানাকার দল। মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই এ ম্যাচে ম্লান মুখে মাঠ ছাড়তে হয় লংকানদের।
১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ম্যাচে আগে ব্যাট করে মাত্র ২১৩ রানে অল আউট হয় ভারত। জবাবে শুরুটা ভালো করলেও ১৭২ রানের বেশি করতে পারেনি শ্রীলংকা। সেসব ছাপিয়ে এখন মূল আলোচনা ফাইনাল ঘিরে। একই ভেন্যু আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই দল। যেখানে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে দুই দলকে।
বৃষ্টি ঘিরে অনিশ্চয়তা
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ৯ দিনের মাঝে এটি হবে ষষ্ঠ ম্যাচ। ফলে পিচ টার্নিং হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে দুই দলকেই বৃষ্টির কথা মাথায় রাখতে হতে পারে। যা বদলে দিতে পারে পিচের প্রকৃতি। তাই বেশ অনিশ্চয়তা নিয়েই লড়াইয়ে নামতে হবে দুই দলকে।
শ্রীলংকার মূল শক্তি
স্বাগতিক শ্রীলংকার মূল শক্তি বোলিং। তবে দলের আক্রমণের অন্যতম ভরসা মহেশ থিকসানা শেষ ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন। তার ছিটকে যাওয়া লংকানদের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ, তার কাছাকাছি মানের কাউকে রিপ্লেস হিসেবে পাচ্ছে না স্বাগতিকরা। তবে একটি বোলিং ইউনিট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দারুণ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে শ্রীলংকা। একজন ব্যর্থ হলে আরেকজন ঠিকই সেটা পুষিয়ে দিচ্ছেন। যার ফলে বেশিরভাগ ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে অল আউট করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তারা।
ভারতের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে দলটির স্পিনাররা সব উইকেট শিকার করেছিলেন। যেখানে পেস বোলাররা ব্যর্থ হলে এগিয়ে আসেন পার্ট টাইম বোলার চারিথ আসালঙ্কা, করেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। তার ৪ উইকেট শিকারের পাশাপাশি দুনিথ ওয়েল্লালাগেও নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
ফাইনালে স্পটলাইট থাকবে মূলত ওয়েল্লালাগের ওপর। তবে পুরোপুরি ছন্দে না থাকলেও মাথিশা পাথিরানাকে হিসেবের বাইরে ফেলতে পারবে না ভারত। থিকসানা না থাকলেও তাই লংকানদের বোলিংকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই রোহিতদের সামনে।
ব্যাটিংয়ের দিক থেকে শ্রীলংকাকে মূলত একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কুশল মেন্ডিস। চলতি আসরে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৫৩ রান করেছেন তিনি। সাদিরা সামারাবিক্রমা এক ম্যাচে বড় ইনিংস খেললেও কেউই ধারাবাহিক নন। যা লংকানদের বড় দুর্বলতা।
ফেভারিট ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং
এদিকে, ভারত ফেভারিট হিসেবেই আসর শুরু করে। একের পর এক ম্যাচ জিতে সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেন তারা। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারলেও এটি ছিল ভারতের দ্বিতীয় সারির দল। মূল খেলোয়াড়রা সবাই ছিলেন বিশ্রামে।
একদিকে ফাইনালের আগে ভারতের মূল একাদশের খেলোয়াড়রা যেমন পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়েছেন; তেমনই দলটির সব ব্যাটারই আছেন দারুণ ফর্মে। রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, ঈশান কিষাণ প্রত্যেকেই বড় ইনিংসের দেখা পেয়েছেন।
এদের সবার মাঝে গিল আছেন বিধ্বংসী ফর্মে। সবশেষ ম্যাচে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পেয়েছেন তিনি। এর আগে হাঁকিয়েছেন দুটি ফিফটি। ব্যাটিং বরাবরই ভারতের শক্তির মূল জায়গা। তবে চলতি আসরে দলটির প্রত্যেক ব্যাটারই ফর্মে থাকা ফাইনালে তাদেরকে এগিয়ে রাখবে।
এদিকে ভারতের বোলিং ইউনিটও সম্প্রতি বেশ ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছে। কুলদীপ যাদবকে মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা। এছাড়া জাসপ্রিত বুমরাহ ফেরায় দলটির বোলিং ইউনিটের শক্তি বেড়েছে বহুগুণ।
অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে আক্সার প্যাটেল ইনজুরিতে পড়লেও তার জায়গায় প্রস্তুত আছেন শার্দুল ঠাকুর ও ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো ক্রিকেটাররা। যাদের মাঝে যেকোনো একজনকে পিচ বুঝে খেলাতে পারে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। ভারতের অন্যান্য বোলারদেরও সহজে ভরসা করতে পারেন রোহিত শর্মা।
মোটাদাগে পরিষ্কার, ফেভারিট হিসেবেই আজ নামছে ভারত। যেখানে ব্যাটিং ও বোলিং সবদিকেই এগিয়ে তারা। থিকসানাকে হারিয়ে শ্রীলংকা আগেই ব্যাকফুটে থাকবে। সেই সঙ্গে তাদের ব্যাটাররা ক্লিক না করলে রেকর্ড অষ্টমবারের মতো শিরোপা নিয়ে উল্লাসে মাততে পারে মেন ইন ব্লুজ।
অন্যথায় সপ্তমবারের মতো শিরোপা জিতে বিশ্বকাপে যাবে শ্রীলংকা। যেখানে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চবার এশিয়ার সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করবে লঙ্কানরা। শেষ হাসি কারা হাসবে- তা জানতে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার।