১১ বছর পর ভারতকে হারাল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক:

এশিয়া কাপের মঞ্চে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচ দেখল ক্রিকেটবিশ্ব। ভারতকে ৬ রানে হারিয়ে জিতে গেলেন টাইগাররা।

সুপার ফোরের শেষ ম্যাচটিতে জয়-পরাজয় কোনো দলের জন্যই জরুরি ছিল না। কারণ ফাইনালিস্ট আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। তবে, এশিয়া কাপের মঞ্চে বাজে পারফর্ম করা বাংলাদেশের জন্য একটা জয় ছিল খুব প্রয়োজনীয়। আর সেই জয়টাই এসেছে বাংলাদেশের এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে। সবশেষ ২০১২ এশিয়া কাপে ভারতকে হারাইছিল টাইগাররা।

শুক্রবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে ভারতকে ৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে এক বল আগে অলআউট হয়ে যায় ভারত।

সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয়ের গড়ে দেওয়া ভিতে দাঁড়িয়ে রানটা বড় করেছিলেন নাসুম আহমেদ-মাহেদী হাসানরা। ওই রানের আগেই ভারতকে থামাতে স্পিনাররাও করেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। ভারতের হয়ে একার লড়াই করেন শুভমান গিল। তার সেঞ্চুরি আর শেষদিকে অক্ষর প্যাটেলের দারুণ ব্যাটিংও জেতাতে পারেনি টিম ইন্ডিয়াকে।

বাংলাদেশের দেয়া ২৬৭ রানের লক্ষ্যে জবাব দিতে নামা ভারতকে শুরুতেই ধাক্কা দেন তানজিম হাসান সাকিব। অভিষিক্ত এই পেসার ব্যাট হাতে দেখিয়েছিলেন আত্মবিশ্বাসের ছাপ। সেটি তিনি টেনে নিয়ে আসেন বোলিংয়েও। ইনিংসের কেবল দ্বিতীয় বলেই রোহিত শর্মাকে ফেরান তানজিম সাকিব। তার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে দাঁড়ানো এনামুল হক বিজয়ের হাতে ক্যাচ দেন ভারতীয় অধিনায়ক।

তানজিমের দ্বিতীয় উইকেটটি ছিল দুর্দান্ত। তিলক ভার্মা তার সঙ্গে খেলেছিলেন ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। সেবার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ, তিলককে আউটও করেছিলেন তানজিম। এবারও করলেন তিনি। আউট হওয়ার আগের বলটি ছাড়েন তিলক, সেটি বেরিয়ে যায়। পরেরটিও একইভাবে ছাড়তে গেলে আঘাত হানে স্টাম্পে। ৯ বলে ৫ রান করে ফিরতে হয় তিলককে।

১৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন শুভমন গিল ও লোকেশ রাহুল। তাদের দুজনের ৫৭ রানের জুটি ভাঙেন মাহেদী হাসান। কিছুটা ভুগতে থাকা রাহুল ৩৯ বলে ১৯ রান করে শামীম হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন। স্পিনারদের তৈরি করা চাপে ফেরেন ইষান কিষানও।

টানা আট বল ডট যাওয়ার পর রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন কিষান। এর মধ্যে সব চাপ সামলে পড়ে থাকেন গিল। তিনি জুটি গড়েন সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে। শুরুতে খুব একটা রানও আসছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে হাত খুলছিলেন দুই ব্যাটার।

শেষ অবধি সূর্যকুমারকে আউট করেন সাকিব। ৩ চারে ৩৪ বলে ২৬ রান করে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ভারতীয় ব্যাটার। তবুও দলের হাল ধরে থাকেন শুভমন গিল। ওয়ানডেতে দুর্দান্ত বছর কাটানো এই ব্যাটার পেয়ে যান সেঞ্চুরির দেখা। মাঝে এসে ১২ বলে ৭ রান করা রবীন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

কিন্তু বাংলাদেশের ভয়ের কারণ হিসেবে থেকে যান শুভমান। এই ব্যাটার সেঞ্চুরি পাওয়ার পর হাতও খুলতে থাকেন ধীরে ধীরে। তাকে আউট করেন মাহেদী হাসান। এই স্পিনারের বলে আউট হওয়ার আগেরটিতেই ছক্কা হাঁকান গিল। এরপর ওভার দ্য উইকেটে এসে করা তার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন শুভমান। ১৩৩ বলের ইনিংসে আটটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় সাজঘরে ফেরত যান।

এরপরও অবশ্য ভয় কমেনি। বাংলাদেশ নেমেছিল কেবল দুই পেসার নিয়ে। শেষদিকেও তাই স্পিনাররা বল করছিলেন। নাসুম আহমেদের করা ৪৫তম ওভারে ১২ রান নিয়ে ম্যাচ বেশ ভালোভাবেই জমিয়ে তোলেন অক্ষর প্যাটেল। পরে মেহেদী হাসানের করা ৪৮তম ওভারে শেষ দুই বলে চার-ছক্কাসহ নেন ১৪ রান।

ম্যাচ চলে যায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে। ১২ বলে ভারতের সমীকরণ দাঁড়ায় ১৭ রানের। মোস্তাফিজের করা ওভারের প্রথম বলেই শার্দুল ঠাকুর মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর অবশ্য চার মেরে ফের ম্যাচ জমিয়ে তোলেন অক্ষর। কিন্তু পরেরটিতেই লং অফে ক্যাচ দিলে আউট হয়ে যান অক্ষর। শেষ হয়ে যায় ভারতের জয়ের সম্ভাবনাও।

এই ম্যাচের আগেই অবশ্য ফাইনাল খেলার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টুর্নামেন্ট শুরু হলেও দ্বিতীয়টিতে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ‍সুপার ফোরে জায়গা করে নেয় সাকিব আল হাসানের দল। কিন্তু এই পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় এশিয়া কাপ বাংলাদেশের জন্য রুপ নেয় হতাশায়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)