কালিগঞ্জে বিয়ে করেছেন চারটি, মামলা করেছেন ১০ টি পরিবারের নামে!
ইব্রাহিম খলিল:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে স্বামী পরিত্যাক্তা এক প্রতারক মহিলার খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে ১০টি পরিবার। কৌশলে তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত সে চারটি বিয়ে করেছে। বিয়ে করার কিছু দিন পর শুরু হয় তার প্রতারনা। নানা রকম তালবাহানা করে স্বামীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে না পারলে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক, নারী নির্যাতন, মারধর জীবন নাশের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। তার হাত থেকে বাচতে তার সাবেক স্বামীরা তার চাহিদা মত টাকা দিয়ে আপোষ মিমাংসা করে তার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলার কলিকাপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী আরিফা পারভীন কালিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন তার জা জাকিয়া পারভীনের একটি কানের দুল হারিয় যায়। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কথাকাটি হয়। তার মধ্যে ছিল স্বামী পরিত্যক্তা কালিকাপুর গ্রামের আজি রহমানের মেয়ে প্রতারক আছিয়া খাতুন। আমার স্বামী স্থানীয় সালিসদের সাামনে সাক্ষী দেওয়ায় সে আমাাদের প্রতি ক্ষুব্দ হয়। এবং আমি বাপের বাড়ি যাওয়ার পথে আমাকে ব্যাপক মারধর করে। এ ঘটনা নিয়ে আমি আছিয়া খাতুনের নামে কালিগঞ্জ গত ৬ আগষ্ট থানায় অভিযোগ করি।
এরপর সে আমার স্বামীসহ কালিগঞ্জ থানায় থানায় তিন জনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় আসামীরা হলেন আমার স্বামী রবিউল ইসলাম, কলিকাপুর গ্রাামের মৃত মোস্তফার ছেলে জামাল ফারুক ও আকবর হোসেনের ছেলে শাহিন আলম।
রবিউল ইসলাম জানান, ভয়ংকর প্রতারক আছিয়া খাতুনের কারনে আমার সুখের সংসার আজ অন্ধকার নেমে এসেছে। মামলার কারনে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আছিয়া খাতুনের লাঠিয়াল বাহিনী আমার বাড়িতে এসে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে আমার ছোট ছোট বাচ্চারা আতংকে থাকে। তিনি আরও বলেন প্রতারনা করে বিয়ে করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার নেশা হয়ে গেছে। তার চাহিদামত টাকা দিতে না পারলে শুরু হয় মামলা দিয়ে হয়রানি। সে এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছে। এবং এলাকার সাধরন মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে চলেছে।
সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কালিকাপুর গ্রামের খলিল সরদারের ছেলে লুৎফর রহমানকে গত ৩০/৩/২০১৬ তারিখে বিয়ে করে। ২০/৭/২০১৬ তারিখে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতন মারধরসহ মামলা করে আছিয়া খাতুন। লুৎফর রহমানের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে সে মামল দফারফা করে আছিয়া খাতুন।
এছাড়া সে কালিগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর গ্রামের জুবায়ের সরদারের ছেলে সহিদুল ইসলামকে বিয়ে করে। তার নামেওযৌতুক ও নারী নির্যাতন মারধরসহ মামলা করে। গত ১৬/৯/২০১৪ তারিখে এফিডেভিট করে উভয়ের মধ্যে ৮ লক্ষ টাকা দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
এছাড়া গত ২৫/৯/২০১৬ তারিখে রঘুনাথ পুর গ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদের ছেলে রুহুল আমিন গাজী সাথে আছিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর তার নামে নারী নির্যাতন যৌতুক মামল করে প্রতারক আছিয়া খাতুন। তার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে সে মামলা মিমাংসা করে নেয়।
এ ছাড়া গত ২৮/৪/২০২০ তারিখে কালিগঞ্জ থানায় কালিকা পুর গ্রামের ফজলে করিমের ছেলে সাদ্দাম হোসেন ও তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে ২০ নং মামলা দায়ের করে। অভিযোগ তারা তার শ্লীলতাহানি মারধর জখম ও জীবন নাশের হুমকি দিয়েছেন। মামালটি এখনও আদালতে বিচারধীন আছে।
মোবাইলে কথা হয় আছিয়া খাতুনের সাবেক স্বামী শহীদুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, সে একটা ভয়ংকর প্রতারক। সে একটা মামলাবাজ মহিলা আমাকে বিয়ের ফাদে ফেলে আমার নামে মামলা করে আমার কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সাবেক স্বামী লুৎফর রহমান বলেন, এই মহিলার কারনে পুরো কালিগঞ্জটা অশান্ত করে তুলেছে। আমাকে ফাদে ফেলে বিয়ে করে কিছু দিন পর মামলা করে আমার কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মামলা থেকে আমি বাঁচতে পারছি।
কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান সাফিয়া করিম জানান, সে একটা ভয়ংকর প্রতারক। প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারনা করে তারপর বিয়ে করে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। তার কথার বাহিরে গেলে সাধারন মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। তার জন্য সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ। তিনি নিরিহ মানুষকে বাচাতে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কালিগঞ্জ থানার এসআই ফাহাদ হোসেন বলেন, আছিয়া পারভীনে একটি মামলা আমি তদন্ত করছি। কানের দুল হারিয়ে যাওয়া নিয়ে ঘটনার সুত্রপাত। তবে কিছু না কিছু ঘটনা না ঘটলে মামলা হয়নি। তবে আমি ঘটনার তদন্ত করে সত্য রিপোর্ট পেশ করবো।
আছিয়া পারভীনের সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, কানের দুল নিয়ে তাদের সাথে আমার কিছু হয়নি। তার আমাকে ধর্ষন চেষ্টা মারধর করেছে বলে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তার চারটি বিয়ে নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন আমি বাজারে আছি পরে কথা বলেন।