শ্যামনগর উপকূলে কিছুতেই থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন
আশিকুজ্জামান লিমন, শ্যামনগর:
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূল অঞ্চলে সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ নদীর মাধবখালী খাল ও পশুরতলা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বোরিং করে বালু উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে ৷
গত ৫ দিন ধরে বিভিন্ন অংশ থেকে উত্তোলনকৃত বালু এমবি নুরানী নামীয় একটি কার্গোযোগে পার্শবর্তী কদমতলা ফরেষ্ট অফিসের পাশে নিয়ে স্তুপাকারে জমানো হচ্ছে। সন্নিকটস্থ ভাঙন কবলিত ৫ নং পোল্ডারের উপকূল রক্ষার বাঁধ সংস্কার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে সরবরাহের জন্য স্থানীয় দুই বালু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ঐ বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা ৷
ভাঙন কবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধের গোড়া থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনার তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন সচেতন মহল ৷ তাদের দাবি বাঁধ মেরামতের জন্য ভাঙনপ্রবণ এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আবার পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়া সত্তেও সুন্দরবন সংলগ্ন অংশ হতে বালু উত্তোলনের ঘটনায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র অধিক মুনাফার লোভে বালু ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট বালু মহালের পরিবর্তে ভাঙন কবলিত অংশের বালু উত্তোলন করে তা পানি উন্নয়ন বোর্ড নিযুক্ত ঠিকাদারকে সরবরাহ করছে।
স্থানীয়ভাবে বসবাসরতরা জানায়, ভাঙনমুখে থাকা এসব এলাকা থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধ করা সত্তেও প্রভাবশালী দুই বালু ব্যবসায়ী তা মানছে না। বরং উর্ধ্বতন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মতি থাকার প্রচারনা চালিয়ে তারা বালু উত্তোলনে বাঁধা সৃষ্টিকারীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
ভাঙন কবলিত উপকুল রক্ষা বাঁধের পূর্ব কালিনগর এলাকার বাসিন্দা সচ্চিনন্দ্র নাথ সরকার বলেন, মালঞ্চ নদী তীরবর্তী বাঁধ প্রায় প্রতি বছরই ভাঙছে। এমন ভাঙনপ্রবণ এলাকার বাঁধ সংস্কার কাজে একই নদীর বালু তুলে বরং ভাঙনকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।
বালু উত্তোলনকারীদের নিষেধ করা সত্তেও উপর মহলের ভয় দেখিয়ে তারা দিব্যি বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত কার্গো চালক মিলন হোসেন জানান, মালিক হাবিবুর রহমানের নির্দেশে তিনি সুন্দরবনের পার্শবর্তী দুটি স্থান থেকে বালু তুলছেন। সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মালিকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
কার্গো মালিক হাবিবুর রহমান জানান, ওয়াপদার বাঁধে জরুরী কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকারিয়া সাহেব ও স্থানীয় চেয়ারম্যান কার্গোটি ভাড়ায় নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন সাতক্ষীরার বালু মহাল ইজারা নেয়া ব্যক্তিরা কোথা থেকে বালু সরবরাহ করছে সে বিষয়ে তার জানা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন জানান, মেসার্স অলি এন্টারপ্রাইজ কদমতলা এলাকায় ১শ ২৫ মিটার ভাঙন কবলিত অংশে জিও টিউব স্থাপনের কাজ চলছে । তবে তারা কাদের মাধ্যমে, কোথা থেকে বালু সংগ্রহ করছে সে বিষয়ে তার জানা নেই। তবে ভাঙন কবলিত অংশের পার্শবর্তী এলাকা থেকে বালু সংগ্রহ করা হলে ভাঙনের ঝুঁকি থেকে যায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাবেক সাধারন সম্পাদক জনাব শরীফ জামিল জানান, আমাদের দেশে বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। বালুর রিজার্ভ নিশ্চিতকরণের পর বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রক্রিয়ায় বালু উত্তোলন করা উচিত। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যেকোন এলাকার জীব ও প্রাণ বৈচিত্র মারাত্বক হুমকির মুখে পড়তে পারে- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সাগরপাড়ের সুন্দরবনের অয়তন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তার উপর যত্রতযত্র বোরিং করে সুন্দরবনের আশপাশ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি রীতিমত আত্মঘাতী হওয়ার মত ঘটনা।
Please follow and like us: