নিরাপদ বিশ্বের জন্য অংশীদারত্ব সুসংহত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অনলাইন ডেস্ক:
বিশ্বকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে বৈশ্বিক অংশীদারত্ব সুসংহত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের অংশীদারত্বকে সুসংহত এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে একটি নিরাপদ ও উত্তম জায়গায় পরিণত করতে আসুন, আমরা হাতে হাত মেলাই।’
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের ৭৯তম বার্ষিক অধিবেশনে সোমবার (১৫ মে) ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পদক্ষেপ ত্বরান্বিতকরণ’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি রেকর্ডকৃত ভাষণে এসব কথা বলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনই সাম্প্রতিক সময়ের আসল চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলে প্রস্তাব করতে চাই, যা এসক্যাপ বিবেচনায় নিতে পারে।’
শেখ হাসিনা প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করে বলেন, “জলবায়ু-সংরক্ষিত উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের এনএপি বাস্তবায়নের পাশাপাশি এনডিসি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উন্নয়নশীল স্তরে উন্নীত দেশগুলোর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রবৃদ্ধিতে উত্তরণের জন্য জ্ঞান-বিনিময়, প্রযুক্তি স্থানান্তর, উদ্ভাবন-চালিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আন্তর্জাতিক সহায়তা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও আইটি-সক্ষম পরিষেবা সুলভ হওয়া উচিত।’
সরকারপ্রধান বলেন, “এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পদক্ষেপের প্রণোদনায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার, বিশেষ করে বর্তমান অংশীদারিত্ব ত্বরান্বিত করতে এবং নতুন অংশীদারিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যার আবাসভূমি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করার কারণে এই অঞ্চলটি বর্ধিত হারে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যদিও বৈশ্বিক নির্গমনে এর অবদান খুবই নগণ্য। তাই আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন প্রচেষ্টা চালানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এ তহবিলের অধীনে প্রায় অর্ধ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮৫১টি প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ইউএনএফসিসিসি’র কাছে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা-ন্যাপ জমা দিয়েছে। এটি ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের সঙ্গে আটটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রজুড়ে ১১৩টি পদক্ষেপ চিহ্নিত করেছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশ ২০২১ সালে ইউএনএফসিসিসিতে একটি উচ্চাভিলাষী ও হালনাগাদকৃত জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জমা দিয়েছে। আমরা একটি নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল ব-দ্বীপ অর্জনের জন্য ১০০ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ গ্রহণ করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপথ ঝুঁকিপূর্ণতা থেকে স্থিতিস্থাপকতার দিকে নিয়ে যেতে দেশটি ২০২২ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, ঘন ঘন জলবায়ু জনিত বিপর্যয় আমাদের সাবলীল উত্তরণ ব্যাহত করতে পারে। জলবায়ু অভিযোজন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস তাই আমার সরকারের নীতিগত অগ্রাধিকার।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের দীর্ঘদিনের উপস্থিতি কেবল গুরুতর নিরাপত্তা হুমকিরই সৃষ্টি করছে না, বরং একটি মারাত্মক পরিবেশগত অবক্ষয়ও ঘটাচ্ছে। আমরা মিয়ানমারে তাদের নিজভূমিতে ফেরত পাঠানোর জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।”