রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ: ব্রিটিশ পুলিশের বিরুদ্ধে ‘অতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগের অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক:

ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভের সময় ‘রিপাবলিক’ ক্যাম্পেইনের প্রধান নির্বাহী গ্রাহাম স্মিথসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে লন্ডন পুলিশ। কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে তাদের গ্রেফতার করে ‘ভীতিকর পরিস্থিতি’ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠেছে ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের বিরুদ্ধে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (৬ মে) স্থানীয় সময় সকালে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভের সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ।

বিক্ষোভকারীরা ‘নট মাই কিং’ লেখা যেসব প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নামেন, সেগুলোও জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রেফতার করা ব্যক্তিদের মধ্যে রিপাবলিক ক্যাম্পেইনের প্রধান নির্বাহী গ্রাহাম স্মিথও ছিলেন। ট্রাফালগার স্কয়ারের মূল জায়গায় বিক্ষোভকারীদের জন্য পানীয় ও প্ল্যাকার্ড সংগ্রহ করার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বাকবিতণ্ডার বেশকিছু ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ‘নট মাই কিং’ লেখা হলুদ টিশার্ট পরে সমর্থকরা বিক্ষোভে নামেন। পুলিশ কর্মকর্তারা এসব প্ল্যাকার্ড জব্দ করে নিয়ে যান।

একটি ভিডিওতে গ্রেফতারের সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এ নিয়ে কোনো কথোপকথনে যাচ্ছি না। তারা গ্রেফতার, এটাই শেষ।’

জানা গেছে, বিক্ষোভের অনুমতির জন্য এর আগে রিপাবলিক ক্যাম্পেইনের নেতা এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন না করার শর্তে বিক্ষোভের অনুমতি দেয়।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, দাঙ্গা, জনশৃঙ্খলা অপরাধ, শান্তি ভঙ্গ এবং রাজ্যাভিষেক ঘিরে জনসাধারণের দুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগে মোট ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১১টার দিকে লন্ডন পুলিশ স্মিথকে ছেড়ে দেয়। এখনও অনেক বিক্ষোভকারী পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

টুইটারে পোস্ট করা এক বার্তায় স্মিথ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে এখন আর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেকবার বলা হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য রাজা আছেন। এখন তার নামে আমাদের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে।’

এদিকে পরিবেশবাদী গ্রুপ ‘জাস্ট স্টপ ওয়েল’ জানায়, তাদের ২০ জনের মতো বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছেন। একটি ছবিতে দেখা যায়, হোয়াইটহলে এক ব্যক্তিকে ঘিরে ধরেছে পুলিশ। তার পরনে সাদা টিশার্ট, যাতে লেখা ‘জাস্ট স্টপ ওয়েল’।

গ্রুপটি বলছে, ৩৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি পেশায় চিকিৎসক। তিনি রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে ভিড়ের মধ্যে ‘জাস্ট স্টপ ওয়েল’ স্লোগান তুলে ধরার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু অন্য ২০ জনের সঙ্গে তাকেও গ্রেফ্তার করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, উৎপাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করার সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিক্ষোভে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো জব্দ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু আর তিনি জানাননি।

এর আগে একটি নতুন আইনের অধীনে এ লন্ডনের পুলিশকে প্রতিবাদবিরোধী ক্ষমতা দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। বুধবার (৩ মে) মেট্রোপলিটন পুলিশ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, রাজ্যাভিষেকের সময় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

গ্রেফতারের ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক আইনে ‘স্পষ্টভাবে সুরক্ষিত’।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের যুক্তরাজ্য শাখার পরিচালক ইয়াসমিন আহমেদ গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাজ্যাভিষেকের সময় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারীদের গ্রেফতারের ঘটনা উদ্বেগজনক।’ তিনি বলেন, ‘এমন কিছু আপনি মস্কোয় (রাশিয়ার রাজধানী) আশা করতে পারেন, লন্ডনে নয়।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ বলেন, ‘নতুন আইনের অধীনে পুলিশকে প্রতিবাদবিরোধী ক্ষমতা দেয়া নিয়ে আমরা আগেই উদ্বেগ জানিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারের ঘটনায় আমাদের দেখতে হবে এর নেপেথ্যে কী কারণ বেরিয়ে আসে। তবে শুধুমাত্র লেখাযুক্ত প্ল্যাকার্ড বহনের জন্য কখনই পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)