খামারের বর্জ্য খালে: দুর্গন্ধে ভেঙে যাচ্ছে বিয়েও, প্রতিকার কীভাবে
অনলাইন ডেস্ক:
প্রভাবশালীদের একাধিক পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারের বর্জ্যে দূষিত হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর সল্লা একআনী খালের পানি। আর দূষিত এ পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। এমনও দেখা গেছে, এলাকায় বিয়ে ঠিক হওয়ার পর শুধুমাত্র দুর্গন্ধের কারণে তা আর হয়নি। বারবার এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও খামারিরা কর্ণপাত করছেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে ঘুলিয়াদহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দেখা যায়, মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে একআনি খালটি। খালের দুপাশে শত শত ঘর থাকলেও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন একাধিক পোল্ট্রি ও ডেইরি খামার।
এ খালেই ফেলা হচ্ছে এসব খামারের সব বর্জ্য। শুকনো মৌসুমে বাঁধ দিয়ে বর্জ্য ফেলা হলেও বর্ষায় সে সুযোগ নেই। খালের পানিতে সরাসরি বর্জ্য ফেলায় স্থানীয়রা এ পানি ব্যবহার করতে পারেন না। অন্যদিকে বর্জ্যের দুর্গন্ধে খালের দুপাড়ের বাসিন্দাদের বসবাস করাই একরকম অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি আছে মশা-মাছির অত্যাচার। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খামারিরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পান না। কেউ আবার সাহস দেখিয়ে কিছু বললেও তাদের নানা রকম হুমকির মুখে পড়তে হয়। গত প্রায় ৫ বছর ধরে একাধিক পোল্ট্রি ও ডেইরি ফার্মের বর্জ্য ফেলায় আশপাশেও ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। গোটা এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে এখন রীতিমতো বাড়িঘর রেখে পালিয়ে যাওয়ার উপক্রম!
খালের আশপাশের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনরাও আসতে চান না। দুর্গন্ধের কারণে ঘরে বসে খাবারও খাওয়া যায় না। আশিকুর রহমান নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, খালের দুপাশে শত শত মানুষের বসবাস। দীর্ঘদিন ধরে এই খালে পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারের বর্জ্য ফেলছে প্রভাবশালী খামারিরা। এতে কষ্টকর হয়ে ওঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাপন।
যুবকটিআরও জানান, কারো বিয়ে নিয়ে কথা হলে দুর্গন্ধের কারণে অন্য পক্ষ পিছিয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন জরুরি প্রয়োজনে এলে দুর্গন্ধে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না। বিষয়টি বারবার খামারিদের জানালেও তারা কর্ণপাত করছেন না। এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার স্বাভাবিক জীবনযাপনে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তার।
আশিকুর ছাড়াও স্থানীয় অনেক ভুক্তভোগী জেলা প্রশাসকসহ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে খামারিদের সঙ্গে সময় সংবাদ কথা বলার চেষ্টা করে লাভ হয়নি। খামারিদের কেউ মোবাইল ফোন ধরেননি বা সামনাসামনি কথা বলেতে রাজি হননি।
এ দিকে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা জমির উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার জানান, খাল সবার ব্যবহারের জন্য। কেউ বর্জ্য ফেলে খালকে ব্যবহার অনুপযোগী করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বংশাই নদীর শাখা এ একআনি খালে প্রায় ২কিলোমিটার এলাকায় ১০টিরও অধিক স্থানে ফেলা হচ্ছে মুরগি ও গরু ফার্মের বর্জ্য। একটি গ্রামেই খালের দুই পাশে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি পোল্ট্রি ও ডেইরি খামার রয়েছে। এ খালেই ফেলা হচ্ছে সব বর্জ্য।