দেবহাটায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে জমি দখলের চেষ্টা; দুজনকে কুপিয়ে জখম
দেবহাটা প্রতিনিধি:
দেবহাটার কুলিয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। এঘটনায় হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রতিপক্ষের দুই শ্রমিক গুরুতর আহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে শশাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকায় জমি জবরদখলে নিতে পরিকল্পিত এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এসময় হামলাকারী ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন জমি জবরদখলে নিতে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের ওপর অর্ধশতাধিক অ্যাসিড ভর্তি বোতল, বস্তাভর্তি ইটের খোয়া ও তীরগুলতির মাধ্যমে মুহুর্মুহু কাচের মার্বেল নিক্ষেপ করে।
এতে আহতরা হলেন, পুষ্পকাটির মঞ্জুর আলীর ছেলে সোহাগ হোসেন (৩৬) ও একই গ্রামের মৃত অহেদ আলী গাজীর ছেলে বিপ্লব (২৩)। আহতরা হামলার সময় ওই জমিতে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। বর্তমানে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিসাধীন রয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের পক্ষে বহেরা গ্রামের মৃত আব্দুল শাহ’র ছেলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৫ সালে তার মা মৃত আমেনা খাতুন, বোন জামাই নূর ইসলাম এবং নিকটাত্মীয় আব্দুর রহিম শশাডাঙ্গা গ্রামের তৎকালীন বাসিন্দা ধরমচাঁদ সানার তিন ছেলে হরেন্দ্র সানা, নরেন্দ্র সানা ও রাজেন্দ্র সানার কাছ থেকে জগন্নাথপুর ছোট মৌজার হাল ১০৫০ দাগে ১৫ একর ৫ শতক জমি ক্রয় করেন। সেই থেকে উত্তরসূরী হিসেবে তারা জমিটিতে মৎস্য ঘের ও চাষাবাদ করে আসছেন।
কিন্তু জমি বিক্রয়ের পর পূর্বের মালিক ধরমচাঁদ সানাসহ তার তিন ছেলে হরেন্দ্র সানা, নরেন্দ্র সানা ও রাজেন্দ্র সানা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে গেলে ভুলবশত গোটা সম্পত্তিটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের রেকর্ডভুক্ত হয়।
এস.এ মালিকানা অনুযায়ী বর্তমানে ওই জমির রেকর্ড সংশোধনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ভুলবশত অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হওয়ার পর তাদের জমিটির উপর কু নজর পড়ে শশাডাঙ্গা গ্রামের মৃত জসীমউদ্দিন সরদারের ছয় ছেলে আব্দুর রহিম সরদার, নরিম সরদার, রশিদ সরদার, তরিকুল সরদার, শহিদুল সরদার, এবাদুল সরদার ও আসাদুল সরদারের। গেল কয়েক বছর ধরে তারা ওই জমিটি জবরদখলের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এনিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। মামলার বিচারকার্য চলাকালে ওই জমিতে ১৪৫ ধারা জারিসহ স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।
বৃহস্পতিবার সকালে জবরদখলের প্রচেষ্টাকারী আব্দুর রহিম সরদার ও তার অপর পাঁচ ভাই নরিম সরদার, রশিদ সরদার, তরিকুল সরদার, শহিদুল সরদার, এবাদুল সরদার ও আসাদুল সরদারের নের্তৃত্বে কুলিয়ার ৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ওরফে তরি সহ অন্তত ৩০/৪০ জনের ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনী পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সিরাজুলদের ওই জমিতে হামলে পড়ে। এসময় সেখানে কর্মরত দুই শ্রমিক সোহাগ হোসেন ও বিপ্লবকে কুপিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। খবর পেয়ে জমির এস.এ মালিক পক্ষের উত্তরসূরী সিরাজুল সহ অন্যান্যরা জবরদখল রোধে তাদের জমিতে যেতে গেলে হামলাকারীরা তাদের ওপর অর্ধশতাধিক অ্যাসিড ভর্তি বোতল, বস্তাভর্তি ইটের খোয়া ও তীরগুলতির মাধ্যমে মুহুর্মুহু কাচের মার্বেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে মালিকপক্ষের কয়েকজন আহত হলে অবস্থা বেগতিক দেখে ভুক্তভোগীরা দেবহাটা থানায় খবর দিলে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা করেছে। এঘটনায় আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।