ধারা দুটি বাতিল করা হবে না: আইনমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে দুটি ধারা বাতিলের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর, সেই ধারা দুটি বাতিল করা হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন, কোনো অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার এবং অপব্যবহার বন্ধে আইনের কিছু সংস্কারের বিষয়ে সরকার আলোচনা করছে। প্রথম আলোর এই প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী।
সরকারের এমন অবস্থানের পেছনে ব্যাখ্যা বা যুক্তি কী—এই প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মুক্তিযুদ্ধ, দেশের ইতিহাসের মর্যাদা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার কথা বলেছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়গুলোতে মানুষের আবেগ-অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু দেশের ভিত্তির এই বিষয়গুলো নিয়ে কটাক্ষ করে স্বাধীনতাবিরোধীরা একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে থাকে। সে জন্য সরকার এই ধারা বাতিল করবে না।
অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার কথা বলা রয়েছে ২৮ ধারায়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে বা উসকানির মাধ্যমে একটা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার এই ধারাও কোনোভাবে বাতিল করা যাবে না বলে সরকার মনে করছে।
এই দুটি ধারা বাতিলের সুপারিশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর বলেছে, এসব ধারায় মতপ্রকাশের বিষয়কে অপরাধ হিসেবে দেখার সুযোগ রয়েছে। এই দুটি ধারার বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ উঠছে আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই।
তবে ধারা বাতিলের সেই সুপারিশ সরকার মানতে রাজি নয়। অবশ্য আইনমন্ত্রী বলেছেন, ধারা দুটির অপব্যবহারের সুযোগ যাতে না থাকে, সে জন্য সংস্কারের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্য আটটি ধারায় সংস্কারের যেসব সুপারিশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর করেছে, সেগুলো সরকার পর্যালোচনা করে দেখছে।
কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর থেকে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে গত বছরের জুন মাসে। সেই সুপারিশের ওপর সরকারের পর্যালোচনা কবে নাগাদ শেষ হবে, সেই প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় আইনমন্ত্রী দেননি।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, কোনো ধারা বাতিল না করে আইনে সংস্কার আনার ব্যাপারে সরকার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। এই প্রক্রিয়ায় চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে মানবাধিকারকর্মী এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনমন্ত্রী পর্যালোচনা সভা করবেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন ধারায় সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনায় যা উঠে আসবে, তার ভিত্তিতে সরকার পদক্ষেপ নেবে।
শুরু থেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিতর্ক চলছে। আইনটির অপব্যবহারের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। আইনমন্ত্রী অবশ্য অপব্যবহারের অভিযোগ স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আইনটির কিছু অপব্যবহার হয়েছে। সে কারণেই সংস্কারের বিষয়ে তাঁরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নিতে চান। তবে তিনি উল্লেখ করেন, আইনটি এবং এর কোনো ধারা তাঁরা বাতিল করবেন না।
এ ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হচ্ছে, সংস্কার করার ক্ষেত্রে আইনের কার্যকারিতা যেন স্থগিত রাখা হয়। এই আহ্বানও বিবেচনায় নিতে রাজি নন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে তাঁরা কিছু বলেননি। তবে কোনো সংস্কার করা হলে আইন স্থগিত করা হবে না এবং এর কোনো সুযোগ নেই।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেসব বিষয়কে অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেগুলো ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেও আছে। কিন্তু ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী অপরাধ হতে হবে সশরীরে। ডিজিটাল অপরাধ সশরীরে সংঘটিত হয় না। সে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকা দরকার। এতে সংবিধানে বাক্স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতার কথা বলা আছে, তা কোনোভাবেই খর্ব হয় না বলে তিনি দাবি করেন।