মাদ্রাসা শিক্ষক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফের ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ

মোমিনুর রহমান,দেবহাটা:

দেবহাটায় শামসুজ্জামান (৫২) নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফের চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছরে এনিয়ে অন্তত ৫ বার ছাত্র বলাৎকারে অভিযোগ মিলল তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শামসুজ্জামান দেবহাটা উপজেলার দক্ষিন কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় এলাহী বকস্ দাখিল মাদ্রাসার ক্রীড়া শিক্ষক।

ভিকটিমের বাবা দক্ষিন কুলিয়ার দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক মাস ধরে তার প্রতিবন্ধী ছেলে ইমরান হোসেন (১২) কে একাধিকবার বলাৎকার করেছেন মাদ্রাসার ক্রীড়া শিক্ষক শামসুজ্জামান। মাদ্রাসা ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে কখনো ভয়ভীতি দেখিয়ে আবার কখনো টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই শিক্ষক তার ছেলেকে বলাৎকার করেন।

প্রায় প্রতিবারই বলাৎকারের পর শামসুজ্জামান ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার হাতে এক’শ থেকে তিন’শ টাকা পর্যন্ত ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। সর্বশেষ সপ্তাহ খানেক আগেও তার ছেলেকে বলাৎকার করেন তিনি। এসময় কিছুটা অস্বাভাবিক ভাবে ভিকটিমকে বাড়ি ফিরতে দেখে সন্দেহ হয় পরিবারের। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দফায় দফায় বলাৎকারের বিষয়টি ভিকটিম তার পরিবারকে অবহিত করে।

ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসির তোপের মুখে পড়ে আত্মগোপন করেন অভিযুক্ত শিক্ষক জামায়াত নেতা শামসুজ্জামান। এঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে বৃহষ্পতিবার (১২ জানুয়ারী) সকালে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ভিকটিমের পরিবারকে নিয়ে মাদ্রাসায় শালিসে বসে ম্যানেজিং কমিটি। একপর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক শামসুজ্জামানকে অজ্ঞাত স্থান থেকে আটকে শালিসে হাজির করেন ভিকটিমের পরিবার। সেখানে ওই প্রতিবন্ধী ছাত্রের বক্তব্য শোনাবোঝা করে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে ছেড়ে দেন ম্যানেজিং কমিটির নেতারা।

এলাকাবাসি জানায়, ইতোপূর্বে কয়েকবার একাধিক ছাত্রকে বলাৎকার করেছেন শামসুজ্জামান নামের ওই লম্পট শিক্ষক। বারবার বলাৎকারের ঘটনা প্রমানিত হলেও সাময়িক বহিস্কার ছাড়া শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্থায়ী কোন শাস্তি মুলোক ব্যবস্থা নেয়নি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বরং অভিযুক্ত শামসুজ্জামান একদিকে প্রভাবশালী জামায়াত নেতা এবং অপরদিকে ধর্নাঢ্য হওয়ায় প্রতিবারই বলাৎকারের পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে ভিকটিমদের পরিবারকে মিমাংসায় বাধ্য করেন।

এতে করে বরাবরই তিনি রয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু বলাৎকার নয়, ২০১৩-১৪ সালে এলাকায় সরকার বিরোধী সহিংস কর্মকান্ডে অন্যতম নের্তৃত্বে ছিলেন অভিযুক্ত এই জামায়াত নেতা শামসুজ্জামান। তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সেসময়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট স.ম গোলাম মোস্তফার বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ সহ একাধিক নাশকতা মামলার আসামী শামসুজ্জামান হাজতবাসও করেছেন একাধিকবার।

ছাত্রকে বলাৎকারের বিষয়ে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা রুহুল কুদ্দুস বলেন, এর আগেও কয়েকবার তিনি একই অপরাধ করেছেন। সেজন্য অভিযোগ পাওয়ার পরপরই শালিসের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষক শামসুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আছাদুল হক বলেন, বারবার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বলাৎকারের মতো জঘন্য ঘটনার জন্য কেবলমাত্র সাময়িক বরখাস্ত উপযুক্ত কোন শাস্তি হতে পারেনা। ভিকটিমের পরিবারকে আইনগত পদক্ষেপ  নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্ত মুলোক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, ছাত্র বলাৎকারের বিষয়টি জেনে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। ভিকটিমের পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)