ব্যাংক খুললেই কবরের মাটি পাবেন লাশ হয়ে পড়ে থাকা সেই বাবা
নিউজ ডেস্ক:
অপেক্ষা সোমবার সকালের। ব্যাংক খুললে হবে টাকার হিসাব-নিকাশ। এরপরই কবরের মাটি পাবেন দুদিন ধরে নিথর হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে থাকা মনির। এমনটিই জানিয়েছেন তার সন্তানরা।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনির আহম্মদ চাকরি করতেন একটি তেল কোম্পানিতে। শনিবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হলে বাবার অবসরকালীন ভাতার টাকা নিয়ে কলহে লিপ্ত হন সন্তানরা।
রোববার বিকেলে মনিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সে রাখা আছে তার লাশ। ঝগড়াঝাঁটিতে ব্যস্ত ছেলে-মেয়েরা। ছেলেদের দাবি- হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৌশলে বাবার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে নেন তাদের এক বোন। সোমবার ব্যাংক খুললে টাকার হিসাব শেষে বাবার লাশ দাফন করবেন তারা।
মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কিছুদিন আগে বাবাকে হাসপাতালে থেরাপি দেওয়ার নাম করে ব্যাংকে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা তুলে নেন আমার বোন বেবী আক্তার। বাবা মারা যাওয়ার পরই টাকা তুলে ফেলার খবরটি আমরা পাই।
তিনি আরো বলেন, আমার ছোট ভাই সৌদি আরব থেকে আসবেন। পাশাপাশি সোমবার ব্যাংক খুললে ব্যাংকে গিয়ে হিসাব পেলে বাবার লাশ দাফন করা হবে।
তবে টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বোন বেবী আক্তার। তিনি বলেন, বাবা কোনো টাকা দেননি আমাকে। আমি কোনো টাকাও ব্যাংক থেকে তুলিনি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এদিকে, বাবার মৃত্যুর একদিন পেরিয়ে গেলেও সন্তানদের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা।
স্থানীয় একজন বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা ছুটে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি এ অবস্থা। একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে ঠিক, এর সঙ্গে কিছু মানুষের মনুষ্যত্বেরও মৃত্যু হয়েছে। যা ভাবতেও খারাপ লাগছে।
তিনি বলেন, অর্থ-সম্পদ নিয়ে ঝামেলা থাকলে আজ না হয় কাল সেটি সুরাহা হবে। কিন্তু মৃত বাবাকে এভাবে দুদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্সে ফেলে রেখে যে স্বার্থপরতার পরিচয় তারা দিলেন, তা যেন আর কারো সঙ্গে না হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় মনির আহমদের লাশ বাড়িতে আনা হলেও টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে সমস্যা চলছে। তার এক ছেলে বিদেশে রয়েছেন, তিনিও দেশে আসবেন বলে জেনেছি।
কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।