শার্শার অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা
আঃজলিল, স্টা রিপোর্টার :
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন যশোরের শার্শার চাষিরা।চলতি মৌসুমে শার্শা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে।বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার প্রায় ৪৫০০ কৃষক।
স্থানীয় বাজারের আড়ৎ গুলোতে গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন বলে কৃষি বিভাগ মনে করছেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন,ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহন করেছেন।এতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে যাতে এবছর ৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা যায়।আগামী বছর ১১হাজার হেক্টর ও তৃতীয় বছর ১৪হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হবে।এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভোজ্য তেলের আমদানি ৮০ভাগ থেকে ৪০ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
অল্প দিনে বেশি ফলনের আশায় চাষিরা এটাকে ‘লাভের ফসল’ হিসেবে দেখছেন।
শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা তরুন কুমার বালা জানান,চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত উপজেলার ৫৮২০ হেক্টর জমিতে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল আগাম জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা।তবে নাবি জাতের সরিষা চাষের জন্য এখনই জমি তৈরি করছেন কৃষকরা।যাতে টার্গেট পূরণে ৭হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে এবার আবাদ করা সম্ভব হয়।
গত মৌসুমে ৪হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন,গত বছরের চেয়ে এবার এক হাজার ৪২০ হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম জাতের সরিষা চাষ হয়েছে।
উপজেলার রাজনগর গ্রামের প্রভাত বিশ্বাস,লক্ষনপুরের খামারপাড়া গ্রামের রায়হান গফুর,পাঁচভুলোট গ্রামের আনোয়ার হোসেন,কাগজপুকুর গ্রামের কবির হোসেন ও গয়ড়া গ্রামের ফারুক হোসেন কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৬বিঘা করে জমিতে অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন বলে জানান তরুন বালা।
উপজেলার রাজনগর গ্রামের প্রভাত বিশ্বাস বলেন,এ বছর ৬বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষা চাষ করেছি।প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। সরিষার গাছ,ফুল ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
লক্ষনপুরের খামারপাড়া গ্রামের রায়হান গফুর বলেন, গত বছর সরিষার দাম ভাল ছিল,চাহিদাও ছিল তাই এবারও সরিষা চাষ করেছি ফলন ভালো হবে। উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরো অনেকেই ঝুঁকে পড়বে।
পাঁচভুলোট এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৫ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা উঠার পর ওই জমিতে ধানের আবাদও ভাল হয় এবং চাষে খরচও কম হয়।
বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের কবির হোসেন বলেন,বারি-১৪ সরিষা গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে,এতে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণও কম লাগে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রতাপ কুমার মন্ডল জানান,কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।এবার প্রায় ৪৫০০জন কৃষককে সরকারি প্রণেদনা দেওয়া হয়েছে।বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।