সেই শিশু আয়াতের বিচ্ছিন্ন মাথা মিলল স্লুইস গেটে
নিউজ ডেস্ক:
চট্টগ্রামে অপহরণের পর কেটে ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া সেই শিশু আয়াতের দুই পায়ের পর মাথার খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী ঘাটের স্লুইসগেট এলাকা থেকে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ির সোহেল রানার মেয়ে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের বাড়িতে ভাড়ায় থাকে আবিরের পরিবার।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক ইলিয়াস খান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে শিশু আয়াতের মাথার খণ্ডিত অংশ পাওয়া গেছে। এর আগে বুধবার দুপুরে দুই পা উদ্ধার করা হয়।
আয়াত নিখোঁজের ৯ দিনের মাথায় ২৪ নভেম্বর রাতে আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকা থেকে আবিরকে আটক করে পিবিআই। আটকের পর তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে খুলে ঘটনার জট। পিবিআই’র কাছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিতে থাকেন আবির। এরপরই তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত বটি ও অ্যান্টি কাটার উদ্ধার করে পিবিআই। উদ্ধার করা হয় আয়াতের জুতাও।
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে আবির জানান, শিশু আয়াতকে অপহরণ করে ছয়-সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা ছিল তার। এজন্য রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি সিমও সংগ্রহে রেখেছিলেন। যাতে নম্বরটি থেকে ফোন করে টাকা দাবি করতে পারেন। কিন্তু সিমটি সচল না থাকায় আর ফোন করতে পারেননি। আয়াত চিৎকার করতে চাইলে তাকে গলা টিপে হত্যা করেন। পরে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে কেটে ছয় টুকরা করে কিছু অংশ সাগরে ভাসিয়ে দেন। আর কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী আকমল আলী ঘাটসংলগ্ন স্লুইসগেটের খালে ফেলে দেন।
এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় মামলা করেন আয়াতের বাবা। ওই মামলায় শনিবার প্রথম দফায় দুদিনের রিমান্ডে পেয়ে আবিরকে সঙ্গে নিয়ে আয়াতের লাশের খণ্ডিত অংশের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পিবিআই। পরে সোমবার আবিরকে ফের সাত দিনের জন্য হেফাজতে নেয় সংস্থাটি। এছাড়া সোমবার রাতে আবিরের বাবা, মা ও বোনকে এ মামলায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের হেফাজতে নেয়া হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় স্লুইস গেটের চারটি প্রকোষ্ঠের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর একটি প্রকোষ্ঠে আটকে যাওয়া পলিথিনে পা দুটি পাওয়া যায়। যেগুলো আবিরের বর্ণনামতো পলিথিনের ভেতর টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল।
জানা যায়, ১৫ নভেম্বর বিকেলে পাশের মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছর বয়সী আলিনা ইসলাম আয়াত। ওই ঘটনায় একই দিন রাতে ইপিজেড থানায় জিডি করেন তার বাবা। সন্তানের সন্ধান না পেয়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন বাবা সোহেল রানা ও মা তামান্না খাতুন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, থানা-পুলিশ ও হাসপাতাল ঘুরেও পাননি আদরের সন্তানকে। পরে সন্ধান দিলে পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছিল পরিবার।