জেলহত্যা মামলা: সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ১০ আসামির খবর কী?
নিউজ ডেস্ক:
আজ জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় এ দিনটি। জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এ দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার ৪৭ বছর। এই নির্মম হত্যা মামলান সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামির মধ্যে ১০ জনই এখনো পলাতক।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুজন বিদেশে রয়েছেন। তাদের এখনো ফিরিয়ে আনা যায়নি।
জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনায় ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে গুলি করেন এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এ মামলার তদন্ত থেমে ছিল ২১ বছর। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। ২৯ বছর পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিন আসামি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১২ আসামি হলেন- লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম, কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) কিশমত হাশেম এবং ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার।
পরে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে তারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পান। অপর আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে। দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে হাইকোর্টের রায়ে খালাস দেওয়া হয়েছিল। তবে আপিল বিভাগ বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
অবশ্য জেলহত্যা মামলায় অব্যাহতি পেলেও ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের (ল্যান্সার) ফাঁসি কার্যকর হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়, যিনি জেলহত্যা মামলায়ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।
জেলহত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী কানাডা এবং লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে চেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে এক অনুষ্ঠানে বলেন, খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য বিকল্প পথ খুঁজতে কানাডার প্রতি অনুরোধ জানান আইনমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডার আইনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয় বলে হাইকমিশনার জানিয়েছেন। তাদের অনুরোধ করেছি, বিকল্প পন্থা বের করা যায় কি না। তাকে বলেছি, একজন খুনিকে আশ্রয় দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। হাইকমিশনার বলেছেন, কানাডা সরকারকে বিষয়টি তিনি জানাবেন।