রোশনী হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করলো যশোর পিবিআই
স্টাফ রিপোর্টার :
পিবিআই প্রধান জনাব বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক তত্তাবধানে ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে এসআই (নিঃ)/ স্নেহাশিস দাস, এসআই ডিএম নুর জামাল হোসেন সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ যশোর জেলার চৌকস দল কর্তৃক পুলিশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ১নং আসামী বুরহান (২০) কে বাগেরহাট জেলার রামপাল থানাধীন ঝনঝনিয়া গ্রামে তার মামা হরমুজ আলীর বাড়ী থেকে এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ৫টা.০৫ মিনিটে ২নং আসামী রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয় (১৯) কে ডিএমপি ঢাকা ভাষানটেক থানাধীন ক্যান্টনমেন্ট গ্যারিসন এলাকার রোড নং-১০, বাড়ী নং-৩২/৩, ফ্লাট নং-৫ বি, তার খালু ইঞ্জিনিয়র মোক্তার হোসেন এর ভাড়া বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
রওশন আরা বেগম রোশনী (৫৩), স্বামী- মৃত মোস্তাফিজুর রহমান, সাং- আশ্রমের মোড় (রেলরোড), থানা- কোতয়ালী, জেলা- যশোর এর স্বামী অনুমান ১৯/২০ বছর পূবে মৃতুব্যবরণ করে। তার ছেলে পিএইচডি ডিগ্রী অজনের জন্য আমেরিকায় অবস্থান করছে এবং মেয়ে স্ট্যাম্পফোড ইউনিভাসিটি, ঢাকায় অধ্যয়নরত থাকায় তিনি একাই নিজ বাসায় বসবাস করতেন। গত ২৯ শে আগস্ট বিকেল অনুমান ০৪.০০ সময় রওশন আরা বেগম রোশনী (৫৩) এর মা সেবিনা বেগম তার মোবাইল ফোনে বারবার কল দিয়ে তাকে না পেয়ে আশ্রম রোডের মেয়ের বাসার বাহিরের গেটের কলিং বেল দেয়। বাসার ভিতর থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বাসার সামনের মেইন গেট খোলা থাকায় মেয়ের বাসার সামনে এসে গ্রীল গেটে তালা লাগানো দেখে পাশের রান্না ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পায় যে, মেয়ের ঘরের মধ্যে আলমারী খোলা এবং সবকিছু এলোমেলো।
তখন সেবিনা বেগম জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিলে কোতয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং সংবাদ পেয়ে পিবিআই, যশোরের ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে ভিকটিম রওশন আরা বেগম রোশনী (৫৩) এর রক্তাক্ত মৃতদেহ তার বেডরুমের বক্সখাটের চালির নিচ থেকে উদ্ধার করে। থানা পুলিশ মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, যশোর মর্গে প্রেরণ করেন। এ সংক্রান্তে কোতয়ালী মডেল থানায় ভিকটিমের মা সেবিনা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা নং-৯২, তারিখ- ৩১শে আগস্ট খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
ঘটনার পরপরই পিবিআই, যশোর উক্ত হত্যাকান্ডের ছায়াতদন্ত শুরু করে। ঘটনাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় পিবিআই, যশোর মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই (নিঃ) স্নেহাশিস দাশ এর উপর অর্পণ করে। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর সঠিক দিক নির্দেশনায় এসআই (নিঃ)/ স্নেহাশিস দাশ সঙ্গীয় অফিসার এসআই (নিঃ) ডি এম নুর জামাল হোসেন ও ফোর্সসহ যশোর জেলার চৌকস দল কর্তৃক পুলিশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে গত ১৩ অগাস্ট তারিখ সকাল সাড়ে ৮ টায় সন্দিগ্ধ আসামী ১নং আসামী বুরহান (২০)কে বাগেরহাট জেলার রামপাল থানাধীন ঝনঝনিয়া গ্রামে তার মামা হরমুজ আলীর বাড়ী থেকে এবং ১৩ সেপ্টেম্বর৫টা ০৫ মিনিটে সন্দিগ্ধ ২নং আসামী রিয়াজুল আলম চৌধুর হৃদয়(১৯) কে ডিএমপি ঢাকা ভাষানটেক থানাধীন ক্যান্টনমেন্ট গ্যারিসন এলাকার রোড নং-১০, বাড়ী নং-৩২/৩, ফ্লাট নং-৫ বি, তার খালু ইঞ্জিনিয়র মোক্তার হোসেন এর ভাড়া বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মৃত রওশন আরা রোশনী গ্রেফতারকৃত আসামী রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয় এর সম্পর্কে আপন খালা। হৃদয় মাঝে মধ্যে তার খালা ভিকটিম রোশনীর বাড়ীতে যাওয়া আসা করত। তার খালা রোশনী বাড়ীতে একা থাকার বিষয়টি সে অবগত ছিল। ভিকটিম রোশনী বাড়ীতে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা কোথায় রাখে হৃদয় তা জানত। ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে হৃদয় তার বন্ধু বুরহানকে সাথে নিয়ে খালা রওশন আরা রোশনীকে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা লুন্ঠনের পরিকল্পনা করে। ইং ২৯শে আগস্ট সকালে আসামী হৃদয় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তার বন্ধু বুরহানকে সাথে নিয়ে তার খালা রোশনীর বাড়ীতে যায় এবং রোশনীর সাথে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে।
কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা অতর্কিত ধারালো চাকু দিয়ে রোশনীর পেটে বুকে ও গলায় উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে মৃতদেহ ঘরে থাকা বক্সখাটের কাঠের চালার নিচে লুকিয়ে রাখে। অতঃপর রওশন আরা @ রোশনীর ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন ও আলমারীতে থাকা স্বর্ণের ও ইমিটেশনের গহনা বের করে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর তারা রওশন আরা রোশনীর আত্মীয়স্বজনের সাথে মিলে চলা ফেরা করে যাতে কেহ তাদের সন্দেহ না করে। উক্ত ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে তারা গ্রেফতার এড়াতে যশোর থেকে তাদের নিজ নিজ আত্মীয়ের বাড়ীতে কৌশলে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে আসামীদ্বয়কে গ্রেফতার পূর্বক জিজ্ঞাসাবাদ কালে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তাদের দেখানো মতে লুন্ঠিত মালামাল, হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও হত্যার সময় তাদের পরনে থাকা ফেলে দেওয়া কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্ত বুরহান (২০) ও রিয়াজুল আলম চৌধুরী @ হৃদয় (১৯)কে অদ্য ১৪ সেপ্টেম্বর মঞ্জুরুল ইসলাম, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে অভিযুক্ত ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এছাড়া ভিকটিমের নিকট থেকে লুন্ঠিত মালামাল নিজ দখলে রাখা ও হত্যাকান্ডের বিষয়টি গোপন রাখার অপরাধে নাহিদ হাসান(১৯), পিতা-মশিউর রহমান এবং আসামী মোসাঃ আসমা বেগম(৪০), স্বামী- আব্দুল হাকিম, উভয় সাং-উপশহর, ডি-বøক, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোরদ্বয়কে গ্রেফতারপূবৃক বিজ্ঞ আদালতে সোপদ করা হয়েছে। মামলা তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
Please follow and like us: