অকটেন আমদানিতে আগ্রহ বিপিসির
অনলাইন ডেস্ক :
আমদানি করা কনডেনসেটে (অকটেনের কাঁচামাল) উৎপাদিত অকটেনের দাম ঠিক না করায় দেশীয় উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে।
জানা যায়, দেশীয় রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব কনডেনসেটের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করে এই উপজাত থেকে অকটেন-পেট্রোল উৎপাদন করত। বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) সেই অকটেন ক্রয় করে খোলাবাজারে বিক্রি করত।
এতদিন ৫৭ টাকা দরে প্রতি লিটার অকটেন (দেশীয় কাঁচামালে উৎপাদিত) ক্রয় করে আসছিল বিপিসি। কিন্তু গত জুন থেকে রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো কনডেনসেট আমদানি করে রাখলেও উৎপাদনে যেতে পারছে না। কারণ হিসাবে জানা যায়, বিপিসি তাদের কাছ থেকে কী দরে অকটেন ক্রয় করবে, তা ঠিক করছে না।
এ কারণে দেশীয় রিফাইনারিগুলো অকটেন উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। তবে দেশীয় কনডেনসেট থেকে অকটেন উৎপাদন অব্যাহত আছে। যার কারণে শুধু দেশীয় কনডেনসেট থেকে যে অকটেন উৎপাদন করা হয়, তা বিপিসি কিনছে। ঘাটতির বাকি অকটেন বিদেশ থেকে আমদানি করছে বিপিসি।
সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে অকটেন বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ৩ হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসাবে গড়ে অকটেনের চাহিদা ধরা হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন। গড়ে প্রতিদিন চাহিদা ৯৫০ থেকে ১০০০ মেট্রিক টন।
এর মধ্যে সরকারি কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৮০০ ব্যারেল বা সাড়ে ৪ লাখ লিটার অকটেন উৎপাদন করছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের কাছে প্রতিদিন ৩ হাজার ৭০০ ব্যারেল বা ৬ লাখ লিটার অকটেন উৎপাদন করার মতো আরও একটি রিফাইনারি প্ল্যান্ট আছে। কিন্তু অকটেনের কাঁচামাল কনডেনসেট না থাকায় ওই প্ল্যান্টটি উৎপাদন না করে বসে আছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার যদি সিলেট গ্যাস ফিল্ডসকে বিদেশ থেকে কনডেনসেট আমদানি করার সুযোগ দিত, তাহলে ওই প্ল্যান্ট থেকেও প্রতিদিন ৬ লাখ লিটার অকটেন উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
জানা যায়, বিপিসি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড থেকে প্রতি লিটার অকটেন ক্রয় করছে ৫৭ টাকা দরে। আর সেই অকটেন খোলাবাজারে বিক্রি করছে ১৩৫ টাকায়। উৎপাদনের পর এই অকটেন সিলেট গ্যাস ফিল্ডস তাদের নিজস্ব যানবাহনে বিপিসির ভান্ডারেও পৌঁছে দিচ্ছে। এরপরও বিপিসি অকটেনের দাম ৫২ শতাংশ বাড়িয়েছে।
দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ হাজার ৫০০ ব্যারেল কনডেনসেট উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসকে দেওয়া হয় ৪ হাজার ২০০ ব্যারেল কনডেনসেট। বাকি ২ হাজার ৩০০ ব্যারেল কনডেনসেট দেওয়া হয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ ৫টি বেসরকারি রিফাইনারি অ্যাকোয়া, পারটেক্স, সুপার পেট্রো কেমিক্যাল ও পেট্রোম্যাক্সকে।
দেশীয় কনডেনসেটের পাশাপাশি বেসরকারি ৪টি রিফাইনারি বিদেশ থেকে কনডেনসেট আমদানি করেও অকটেন উৎপাদন করছে। খোদ বিপিসি সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা কনডেনসেট দিয়ে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে দেশীয় রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলোর।
আর পেট্রোলসহ এই উৎপাদন ৬০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। সে হিসাবে বছরে ৭ লাখ মেট্রিক টন অকটেন-পেট্রোল উৎপাদনের সক্ষমতা আছে দেশীয় রিফাইনারিগুলো। দেশে প্রতিবছর পেট্রোলের চাহিদা গড়ে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন। অকটেন-পেট্রোল মিলে বছরে চাহিদা সর্বোচ্চ ৭ লাখ মেট্রিক টন।
কিন্তু রহস্যজনক কারণে বিপিসি দেশীয় রিফাইনারিগুলোকে আমদানি করা কনডেনসেট দিয়ে অকটেন-পেট্রোল উৎপাদনের পথ বন্ধ করে রেখেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেসরকারি রিফাইনারিগুলো গত জুনে উচ্চমূল্যে কনডেনসেট আমদানি করে রাখলেও সেই কাঁচামাল দিয়ে অকটেন-পেট্রোল উৎপাদন করতে পারছে না। তারা স্থানীয়ভাবে পাওয়া কনডেনসেট দিয়ে এখন স্বল্প পরিমাণে অকটেন-পেট্রোল উৎপাদন করছে।
তারা বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাম ঠিক না করলে দেশীয় অকটেন উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে। বিপিসি বর্তমানে আমদানি করা অকটেন-পেট্রোল দিয়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি আমদানি করা কনডেনসেটের দাম ঠিক করে দেওয়া হয়, তাহলে দেশীয় রিফাইনারিগুলোর উৎপাদিত অকটেন-পেট্রোল দিয়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ সম্ভব হতো।
বিপিসির একটি সূত্র জানায়, নিয়ম হলো তারা যে দরে বিদেশ থেকে অকটেন আমদানি করছে, এর থেকে ২-৩ শতাংশ কম দরে দেশীয় রিফাইনারিগুলো থেকে কিনবে। এর আগেও বিপিসি বেসরকারি রিফাইনারিগুলো থেকে ৬৭ টাকা দরে আমদানি করা কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত অকটেন ক্রয় করত।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজরে কনডেনসেটের দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন দাম ঠিক করা হচ্ছে না। গত জুন থেকে দাম ঠিক করা হচ্ছে না। এ কারণে দেশে আমদানি করা বিপুল পরিমাণ কনডেনসেট থাকলেও তা দিয়ে অকটেন উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এ সপ্তাহের মধ্যে দাম ঠিক করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু পণ্যের দাম ঠিক করা হয়েছে। শিগগিরই অকটেনের দামও ঠিক করা হবে।