নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও মন্দিরসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বিএনপি
আঃজলিল:
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় দুস্কৃতিকারীদের হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও মন্দিরসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। শনিবার তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে পাঁচ পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা ও দুই মন্দিরে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির সংসদ সদস্য ও হুইপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, নিপুণ রায় চৌধুরী, নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জুলফিকার আলী, সহ-সভাপতি আকরামুজ্জামান মিলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার রিজভী জর্জ, লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জি এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক দিলীপ সাহার বাড়ি পরিদর্শনকালে নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতারা এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের কারণে এই হামলা হয়েছে। ‘নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষীদের বের করতে হবে এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
বিএনপি নেতারা দিলীপ সাহার ভাই দীপংকর সাহা ও বৃদ্ধ মা বিজলী সাহার সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সান্ত¡না দেন। দীপংকর সাহা ও বিজলী সাহা গত ১৫ জুলাই ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। নিরাপত্তায় বসবাস করাই এখন আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
পরে তারা অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহার বাড়িঘর পরিদর্শন করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর নেতৃবৃন্দ দিঘলিয়া রাধা গোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শিবনাথ সাহার সঙ্গে কথা বলেন এবং সমবেদনা জানান। এখানে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতারা।
খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘দোষীরা শাস্তি পেলে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। এখানে কোনও সম্প্রদায়গত শ্রেণি-বিভাগ না করে এক হয়ে বসবাস করতে পারলে তবেই সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হবে, শান্তি আসবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা হলেও সেগুলো বিচার না হওয়ায় একই ঘটনা বারবার ঘটছে। এসব ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।’ হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা ‘নীরব’ ছিল বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার এক কলেজছাত্রের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ঘিরে গত ১৫ জুলাই বিক্ষোভ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। বিক্ষুব্ধ লোকজন একপর্যায়ে সন্ধ্যার পর সাহাপাড়ার তিনটি বাড়ি ও দিঘলিয়া বাজারের দুটি দোকান ভাঙচুর করেন এবং গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘরটি পুড়ে যায়। এ ছাড়া সাহাপাড়ার রাধা গোবিন্দ মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স, আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাঙচুর ও মহাশ্মশান কালিবাড়ি মন্দিরের ক্ষতি সাধন করেন বিক্ষুব্ধরা। সে সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। সেই থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২০০ থেকে ২৫০ অজ্ঞাত আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা করেছে। এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।