কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় তিন জনের সাক্ষ্য গ্রহন

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

সাতক্ষীরায় কলারোয়ায় সাবেক বিরোধীয় দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও
বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলার সাক্ষী দিলেন পৌর আওয়ামীলীগের
সাধারন সম্পাদক শহীদুল ইসলামসহ তিন জন। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার স্পেশাল
ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মন্ডল কাঠগোড়ায় উপস্থিত থাকা
বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিসহ ৪০ জন
আসামীর উপস্থিতিতে এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আগামি পহেলা আগষ্ট
সোমবার পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
সাক্ষী দাতাদের মধ্যে কলারোয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল
ইসলাম ছাড়া অন্য দুই জন হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন ও আনছার
আলী।
আদালত সূত্রে জানা যায়, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের দু’টি মামলায়
কারাগারে থাকা ৪০ জন আসামীকে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জেলা কারাগার
থেকে স্পেশাল টাইব্যুনাল-৩ এর কাঠগোড়ায় হাজির করানো হয়। এ মামলায়
আরো নয় জন আসামী পলাতক রয়েছে। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে মামলার
কার্যক্রম শুর হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার
কলারোয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জব্দ
তালিকার সাক্ষী আনছার আলী ও মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেনকে সাক্ষী
হিসেবে হাজির করানো হয়।
আসামীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২), অ্যাড.
মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাড. কামরুজ্জামান ভুট্টো, অ্যাড. এবিএম
সেলিম, অ্যাড. সোমনাথ ব্যানার্জী প্রমুখ। এছাড়া নয়জন পলাতক
আসামীর পক্ষে দায়িত্ব পালন করেন অ্যাড. শামীম রেজা।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড.
আব্দুল লতিফ, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুল বারি, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড.
ফাহিমুল হক কিসলু, অ্যাড, নিজামউদ্দিন, অ্যাড, তামিম আহম্মেদ
সোহাগ, অ্যাড. শেখ আজাহার হোসেন. অ্যাড, আব্দুস সামাদ, অ্যাড.
সৈয়দ জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ ঃ ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর
ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে
সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের
সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলার অভিযোগ ওঠে
তৎকালীন এমপি হাবিবসহ বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায়
তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান,
আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন, জোবায়দুল হক রাসেল, মহিলা আওয়ামী
লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, শহিদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া উপজেলা
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ
হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা
৭০/৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৮জনকে
সাক্ষী করা হয়। বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই
মহামান্য হাইকোর্ট নি¤œ আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার
করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। মুখ্য বিচারিক হাকিম
নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগটি এজাহার
হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ
দেন। ২০১৫ সালের ১৭ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে
আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে
এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-
২য় আদালতে বিচারাধীন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি ২০২১ সালের ৪
ফেব্রæয়ারি অভিযোগপত্রে উল্লেখিত তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক
সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার থেকে
সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল
ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির। এরমধ্যে আসামী মাহাফুজুর রহমান সাবু
কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এবং ৯ জন আসামী পলাতক
রয়েছেন। বাকী ৪০ জন আসামী কারগারে রয়েছেন। চলতি বছরের গত ১৬ জুন
অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলায় চার্জ গঠন করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)