শিক্ষককে মারার আগে সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে সেই ছাত্র, যা ঘটল আড়ালে
নিউজ ডেস্ক:
উৎপল কুমার সরকার। শিক্ষকতার পাশাপাশি শৃঙ্খলা কমিটির দায়িত্বও পালন করতেন। মাঝে মধ্যেই ছাত্রদের চুল কাটতে বলতেন। শিক্ষার্থীদের অনিয়ম দেখলেও সমাধানের চেষ্টা চালাতেন। তার এমন শাসনই কাল হয়ে দাঁড়ায় শিক্ষক উৎপলের। ৩৫ বছরের আগেই হারাতে হয় প্রাণ। তাও নিজের প্রতিষ্ঠানেরই দশম শ্রেণির ছাত্রের হাতে।
শিক্ষক উৎপল হত্যার বিচারের দাবিতে এরই মধ্যে সরব হয়ে উঠেছেন সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষকের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার লোকজনও।
আশুলিয়ার চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রের ক্রিকেট স্ট্যাম্পের আঘাতে নিহত হন উৎপল কুমার সরকার। সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান।
নিহত উৎপল চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েকদিন আগে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক বখাটে ছাত্র। এরপর ওই ছাত্রকে শাসন করেন শিক্ষক উৎপল। এর জের ধরে ২৫ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষকের ওপর হামলা চালায় ছাত্রটি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ২৫ জুন কলেজের মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এ সময় মাঠে খেলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন উৎপল। দুপুর আড়াইটার দিকে সবার সামনে ক্রিকেট স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে উৎপলের মাথা ও পেটে বেধড়ক আঘাত করতে থাকে ওই বখাটে ছাত্র। বিষয়টি বোঝার আগেই রক্তাক্ত হন উৎপল। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় নারী ও শিশু কেন্দ্র হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। ১৬ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় শরীরে। সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মারা যান তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, আমাদের স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। দুপুরে মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক উৎপলকে হঠাৎ করে এসে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে ওই ছাত্র। স্ট্যাম্পের আঘাতে শিক্ষকের মাথায় জখম হয়।
অধ্যক্ষ বলেন, স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন উৎপল। তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন সময় চুল কাটতে বলাসহ বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন। বিভিন্ন অপরাধের বিচারও করতেন তিনি। হয়তো কোনো কারণে সেই শিক্ষকের ওপর ছাত্রটির ক্ষোভ ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারী বলেন, হামলার পরে বুঝতে পেরেছি ওই ছাত্র হামলার উদ্দেশ্যে আগেই বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে নিয়েছিল। যেন সিসি ক্যামেরায় এ ভিডিও দেখা না যায়।
বখাটে ওই ছাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মালিক হাজি হযরত আলীর ভাগ্নে উজ্জ্বল হাজির ছেলে। সে বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। হামলার পরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করলেও প্রভাব খাটিয়ে ছাড়িয়ে নেয় তার পরিবার। এরপর পালিয়ে যায় ওই ছাত্র। সোমবার চিত্রশাইল এলাকায় তাদের বাসায় গিয়ে মা-বাবাসহ কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, হামলার শিকার আহত শিক্ষক মারা গেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামি বখাটে ছাত্রকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আশা করি দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করা হবে।