বৃষ্টি আর বানের পানির দুর্ভোগে একাকার উত্তর-পূর্বাঞ্চল

একদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি আরেকদিকে মুষলধারে দিনভর বৃষ্টি। দুইয়ে মিলে দুর্ভোগে একাকার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল।

এ সব অঞ্চলের কমপক্ষে দশটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি থাকায় বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার সংকটে ভুগছেন মানুষ।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষ।

বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য–সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

শনিবার ভোরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে বন্যার পানির দাপটে ভেঙে যায় ২৩ নম্বর ব্রিজ এলাকার একটি অংশ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে ঢাকা ও ময়মনসিংহসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ।

শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পানির প্রবল স্রোতে রেলওয়ে ব্রিজের দুই পাশে মাটি ধসে গেলে ব্রিজ ভেঙে যায়। লাইনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।

এতে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি মোহনগঞ্জে আটকা পড়েছে। মোহনগঞ্জের সঙ্গে ময়মনসিংহসহ ঢাকার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, মোহনগঞ্জসহ ছয় উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

এসব উপজেলার প্রায় ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দী। জেলার সঙ্গে কলমাকান্দা উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দি মানুষরা এখন ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র পানি বিপদসীমার উপরে থাকায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার দুই শতাধিক চরে পানি ওঠায় দুর্ভোগে ছয় লাখেরো বেশি মানুষ।

চরাঞ্চলের সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগের ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীচু চরের বসতে পানি প্রবেশ করায় লোকজন আসবাবপত্র নিয়ে উঁচু জায়গায় চলে যাচ্ছে।

অনেকেই ঘরের ভেতর চৌকি উঁচু করে অবস্থান নিয়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পশুখাদ্যের সংকট। ডুবে আছে ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে।

তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি উঠানামা করলেও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে । পানিবন্দি রয়েছেন পাঁচ উপজেলার নিচু এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

এসব এলাকার মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়া ও চারদিক বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন।

লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার কোনো বাঁধ কিংবা এস্পার এখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

শেরপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মহারশী এবং সোমেশ্বরী নদী এলাকার আছেন বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার সংকট।

এসব এলাকার রামেরকুড়া, দিঘীরপাড়, চতলের বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকছে। ফলে ওইসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উজানের ভারতের মেঘালয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি নদীর পানি বেড়ে চেলারর সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ জুন সকালে ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী ও মহারশী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২০ গ্রাম আকস্মিক বন্যাকবলিত হয়েছিলো।

টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ভারত থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে উপজেলার হাওড়া নদীর দক্ষিণাংশে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

এ বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে কৃষকের সবজি ক্ষেত, রোপা ধানের জমি, বীজতলা, ঢলের পানিতে অসংখ্য পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে চাষিদের মাছ।

উজানের ঢলের পানিতে আখাউড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।

বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যালয় ও কাস্টমস হাউজ।

জামালপুরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে যমুনাসহ অন্যান্য নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনার পানি শুক্রবার বিকালে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

পাহাড়ি ঢলে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কের মন্ডল বাজার এলাকায় ভেঙে উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি, বেলগাছা, পাথর্শী, নোয়ারপাড়া, চিনাডুলি ও সাপধরি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)