দেশীয় পাঁচ ব্র্যান্ডের চিনিতে মিলেছে প্লাস্টিক
নিউজ ডেস্ক:
দেশের বাজারের পাঁচটি ব্র্যান্ড ও ২টি নন-ব্র্যান্ডের চিনিতে আশঙ্কাজনক মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
আর এ মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ এতই বেশি যে, দেশের মোট জনসংখ্যার দেহে শুধুমাত্র চিনির মাধ্যমেই প্রতিবছর গড়ে ১০.২ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রবেশ করতে পারে।
গবেষণায় ঢাকার বিভিন্ন সুপার মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা পাঁচটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ও দুটি নন ব্র্যান্ডের চিনিতে কেজিপ্রতি গড়ে ৩৪৩.৭টি প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। অধিকাংশ কণাই ৩০০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট আকারের এবং কালো, গোলাপী, নীল ও বাদামী বর্ণের।
এছাড়া এসব প্লাস্টিক কণার মধ্যে রয়েছে এবিএস, পিভিসি, পিইটি, ইভিএ, সিএ, পিটিএফই, এইচডিপিই, পিসি ও নাইলন নামক রাসায়নিক কণা।
তবে, গবেষণায় নমুনা হিসেবে পরীক্ষিত ব্র্যান্ডগুলোর নাম প্রকাশ করেননি গবেষকরা।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশনার জন্য জনপ্রিয় সায়েন্স জার্নাল “সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট” কর্তৃক গৃহীত হয়েছে, এবং খুব শিগগিরই এটি প্রকাশিত হবে।
তবে গবেষণাপত্রটির একটি ভার্সন এরই মধ্যে অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষক দলের প্রধান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি এক গবেষণায় মানবদেহের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এবার আমরা আমাদের চিনিতেও এর উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছি। পাশাপাশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার, রাসায়নিক প্রকৃতি ও আকৃতিও শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
তিনি আরো বলেন, মানবদেহ কিংবা মানবদেহে প্রবেশের বিভিন্ন মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি একদিকে যেমন উদ্বেগের, একই সঙ্গে দুঃখজনক হলো এটি আমাদের দেহে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে সারাবিশ্বেই কিন্তু গবেষণা এখনো খুবই অপ্রতুল। তবে আমরা পাখি ও ব্যাঙ্গাচিসহ বিভিন্ন প্রাণী ওপর গবেষণা করেছি এবং করছি। তাতে আমরা এসব প্রাণীর দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব লক্ষ্য করেছি। এটি কিন্তু অন্যান্য দূষণকারী পদার্থকে সাপোর্ট করে, একইসঙ্গে সেকেন্ডারি ভেক্টর হিসাবেও কাজ করে। সুতরাং এটি মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ধারণা করছি, প্রক্রিয়াকরণ বা মোড়কজাত করার সময় প্লাস্টিক কণা চিনিতে প্রবেশ করে থাকতে পারে। আমদানিকৃত চিনিতেও এটি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি চিনিতে এ মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রোধে আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী গৃহস্থালি, শিল্প কলকারখানাসহ প্রতিটি খাতে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ২০২০ সালে সারা বিশ্বে এ প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৬৭ মিলিয়ন টন, যার অর্ধেকেই উৎপাদন হয়েছে এশিয়া মহাদেশে।
চাষকৃত চিংড়ি, লবণ, আটা, ফলমূল, শাকসবজি, বিয়ার, মধু, দুধ ও নানান রকম নাস্তার মতো খাদ্যে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।