দীর্ঘমেয়াদি লিভারের রোগীরা যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
অনলাইন ডেস্ক :
লিভারের অসুখ অনেক সময় জটিল আকার ধারন করে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবন পদ্ধতিতে বদল না আনলে বড় বিপদ হতে পারে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ফারুক আহমেদ।
স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ সাধারণত দূষিত পানিবাহিত ভাইরাস (হেপাটাইটিস এ, ই)-এর সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে যা চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এ সময় রোগীর চোখ, প্রস্রাব ও শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে ও ক্ষুধামন্দা, বমিভাব ও বমি, শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়; অধিক সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তির দরকার পড়ে। এই স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীদের অল্প অল্প করে বারবার আহার গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়।
দীর্ঘমেয়াদি লিভার রোগ বা ক্রনিক হেপাটাইটিস যেসব কারণে হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলো হেপাটাইটিস বি, সি সংক্রমণ, লিভারে চর্বিজনিত রোগ, অ্যালকোহল বা মদ্যপান ইত্যাদি। এসবে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত নিজের অজান্তে লিভারের প্রদাহ ও ফাইব্রোসিস (আঁশ তৈরি হয়ে লিভার শক্ত হওয়া)-এ ভুগতে থাকেন।
এ সময়টায় লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়। লিভারে প্রদাহ ও ফাইব্রোসিস ১০ থেকে ২০ বছর ধরে চলমান থাকলে একপর্যায়ে লিভারের মধ্যে অজস্র গুটি তৈরি হয়, যাকে লিভার সিরোসিস বলা হয়। এ অবস্থায় লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও রক্ত পরিসঞ্চালনে বাধার সৃষ্টি হয়। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি শারীরিক দুর্বলতা সত্ত্বেও প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
লিভার সিরোসিসের জটিলতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পেটে, পায়ে পানি আসা, মস্তিষ্কের বৈকল্য হয়ে অজ্ঞানতার প্রবণতা দেখা দেওয়া, কিডনির সমস্যা হওয়া, সার্বক্ষণিক জন্ডিস দেখা দেওয়া, রক্তবমি হওয়া ইত্যাদি। এসব জটিলতা দেখা দিলে তাকে Decompensated liver Cirrhosis বা লিভার সিরোসিসের শেষ পর্যায় বলা যায়।
লিভারের চর্বিজনিত রোগ বা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মাঝে মাঝে অভুক্ত থাকা বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং থাকা উত্তম ও সুবিধাজনক যা তাদের লিভারের চর্বি ও শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা ও খাদ্যাভাসের দিকেও খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।
এ ধরনের রোগীদের অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় বা চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ না করাই শ্রেয়। ফলমূল ও সবজিজাতীয় খাবার, পানি, পানীয়, পরিমাণমতো শর্করা (রুটি, ভাত, চিড়া, মুড়ি) ইত্যাদি ও আমিষ (মাছ, গোস্ত ইত্যাদি) গ্রহণ করা উচিত। তেলে ভাজা, ঝালমসলাযুক্ত খাবার, বাইরের খোলা খাবার ও পানীয় বর্জন করা উচিত।