আশাশুনির খাজরায় ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট
রঘুনাথ খাঁঃ
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চার মাস পর
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান
শাহানেওয়াজ ডালিমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা পরাজিত প্রার্থীর
কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে।
লুটপাটে বাধা দেওয়ায় এক কলেজ ছাত্রীসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে
জখম করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত
ইউনিয়নের গদাইপুর ও হেতালখালি গ্রামে এ হামলা চালানো হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
গদাইপুর গ্রামের মুকুল মোল-ার ছেলে রাসেল মোল-া জানান, গত
৫ জানুয়ারি খাজরা ইউপি নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগ নেতা
অহিদুল ইসলামের আনারস প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন এমন
অভিযোগে গত ১৯ এপ্রিল চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের
লোকজন তাদের দোকান ভাঙচুর করে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের নেতৃত্বে
ডাকাত খোকন, কামরুজ্জামান ওরফে পুলিশ, হিমো, সেলিম, সালাম
হাতে লোহার রড, বাঁশের লাঠি ও রাম দা নিয়ে তাদের বাড়ির মধ্যে
ঢোকে। এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল কমপক্ষে ২৪/২৫ জন সশস্ত্র
সন্ত্রাসী। বাবা মুকুল মোল-াকে ধাওয়া করলে তিনি ঘরের মধ্যে
ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন। এ সময় বারান্দায় অবস্থানকারি সাতক্ষীরা
সরকারি কলেজ পড়–য়া বোন সুরাইয়া পারভিন চুমকিকে মারপিট
করে ডাকাত খোকন তার স্মার্ট ফোনটি কেড়ে নেয়। পরে
মোবাইল থেকে ছবি ডিলেট করে ফেরৎ দেওয়া হয়। চলে যাওয়ার
আগে হামলাকারিরা ভোটের আগে বাবা মুকুলের উপর হামলার
মামলার বাদি (রাসেল) হিসেবে তাকে মামলা তুলে নিতে বলে হুমকি
দিয়ে চলে যায়। এর আগে গদাইপুর গ্রামের অভি শেখকে রাস্তার
উপর ফেলে মারপিট করা হয়।
নরিম আলী মোল-া জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিয়ে ডালিম
চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় তার
বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। ঘরের মধ্যে ঢুকে তারা
বেড়জাল, নগদ ১০ হাজার টাকা, সিলিং ফ্যানসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে। রাতে ঘরের মধ্যে থাকা টিভি, ফ্রিজসহ
মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়।
এরপরপরই আওয়ামী লীগ নেতা শরবৎ হত্যা মামলা তুলে না নিলে ছেলে
সবুজ ও শিমুলকে হত্যা করা হবে বলে মা শেফালী খাতুনকে হুমকি
দিয়ে যায় চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে
গদাইপুর গ্রামের মৃণাল মণ্ডল নামের একজনকে ধাওয়া করে ডালিম
চেয়ারম্যানের লোকজন। গালিগালাজ করে হিটলারের বাড়িতে যেয়ে।
রব্বানী মোল-ার ছেলে জামাল ও বাবুর দু’টি দোকান ভাঙচুর করার
চেষ্টা করলে দ্রত শার্টার লাগিয়ে পালিয়ে যায় তারা। একই সাথে
রবিউল মোড়লের বাড়ি ভাঙচুর করে হামলাকারিরা। ভাঙচুর করা হয়
অজিয়ার মোল-ার ছেলে অহিদুল ইসলামের বাড়ি। লুটপাট করা হয়
মালামাল। এ ছাড়া আনারস প্রতীকে ভোট দেওয়ার কারণে
হেতালখালির আতি মোল-ার ছেলে রুহুল আমিন, গদাইপুরের জালাল
মোল-ার ছেলে আশরাফ, একববর শেখের ছেলে জহুরুল শেখ ও আমের আলী
মোল-াকে মারপিট করা হয়। আমের আলী মোল-ার বাড়ি থেকে বেড়
জাল ও নগদ ১০ হাজার টাকা লুটপাট করা হয়। আইজুল ও লতিফ
মোড়লের বাড়িতে ঢুকে ধানের আউড়িতে লাঠি বসিয়ে দিয়ে
রাতে ওই ধান নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যায় হামলাকারিরা। বন্ধ করে
দেওয়া হয়ে কামালের মুদি দোকান। ঘুঘুমারি ও সুরেরাবাদের
মধ্যবর্তীকার খাল লাল পাতা মেয়ে দখলে নেয় তারা।
এদিকে গত ৫ জানুয়ারি খাজরা ইউপি নির্বাচনে আনারস
প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অহিদুল ইসলাম জানান,
নির্বাচন পরবর্তী চার মাসে প্রতিনিয়ত তার কর্মী সমর্থকদের
উপর হামলা অব্যহত রেখেছে রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে
শাহানেওয়াজ ডালিম। এপর্যন্ত শতাধিক নেতা কর্মী
নির্যাতনের ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। এরপরও বুধবার তার
কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে লুটপাট করেছে।
হামলায় আহত হয়েছে সাতজন। পথে নতুন করে হামলার ভয়ে তারা
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেনি।
এ ব্যাপারে বুধবার রাত সাতটা ৩৫ মিনিটে শাহনেওয়াজ ডালিমের
সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়্ াযায়। তবে তার ভাই
জুলফিকার রহমান হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভাই ডালিম
খুলনায় রয়েছে। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোমিনুর রহমান বলেন,
অভিযোগ পেয়ে সেখানে উপপরিদর্শক নবাব আলীর নেতৃত্বে
পুলিশ পাঠানো হয়। হামলা ও মারপিটের অভিযোগের ব্যাপারে নবাব
আলীর কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া
হবে। তবে বুধবার রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তিনি কোন
লিখিত অভিযোগ পাননি।