উৎসবে খান সহজপাচ্য খাবার

অনলাইন ডেস্ক :

ঈদের খুশির অন্যতম আকর্ষণ গুরুপাক ও লাগামহীন খাওয়া-দাওয়া। অনেকে ভাবেন রোজায় খাবারের ব্যাপারে যে বাধ্যবাধকতা ছিল, ঈদের দিনে সেটা আর থাকে না। তাই যখন ইচ্ছা, যা ইচ্ছা খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি, পেট ফেঁপে যাওয়া, পেটে গ্যাস ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। কারণ এক মাসের সিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে দেহের বিপাক ক্রিয়ায় একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসে। তারপর হঠাৎ একদিনে অতিরিক্ত ভোজন পাকস্থলী সহ্য করতে পারে না। অর্থাৎ পাকস্থলীর এনজাইমগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এ জন্যই জেনে-বুঝে খাওয়া উচিত।

তাই ঈদের খাবারের তালিকায় সব বয়সের ও সবার উপযোগী খাবার থাকা উচিত। খাবারে ঝাল-মসলা, তেল, ঘি যত কম হয়, তত ভালো। পোলাও রোস্ট ঘি’র পরিবর্তে উদ্ভিজ তেল দিয়ে রান্না করা যায়। ঘ্রাণের জন্য শেষ মুহূর্তে এক-দুই চামচ ঘি ছড়িয়ে দিতে পারেন। যাদের পেটের সমস্যা তারা অল্প মসলার তৈরি মাছ বা মুরগির কোরমা খেতে পারেন। এটা যেমন উপাদেয়, তেমনি সহজপাচ্য। পোলাও বিরিয়ানি খেতে অসুবিধা হলে পোলাওর চালের ভাত অথবা সেই ভাতকে সামান্য তেল দিয়ে ফ্রাইড রাইস করে খাওয়া যায়।

ব্যতিক্রমী খাবার হিসাবে খেতে পারেন চালের রুটি সেঁকা পরটা, নানরুটির সঙ্গে তন্দুরি চিকেন। কোরমা, মুরগির হালকা মসলার রান্না খাবারে নতুনত্ব আনতে পারে। এই দিনে শাসলিক ও বেল হালকা উপাদেয় খাবার। নানা ধরনের সবজি দিয়ে বিফ অনিয়ন ও চিকেন ভেজিটেবল বেশ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। লাল মাংস এড়াতে ভাপা ইলিশ বা কোরাল, স্মোকড ফিশ, ফিশ রোল করা যায়।

গরমের মধ্যে ঈদ হওয়ায় পানিস্বল্পতার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য প্রতিটি বাড়িতে শরবত ও ক্লিয়ার স্যুপ থাকা উচিত। তবে কার্বোনেটেড পানীয়র পরিবর্তে ফলের রস দিয়ে আপ্যায়ন করা উচিত। এখন বাজারে প্রচুর আনারস ও তরমুজ রয়েছে। এগুলো দিয়ে শরবত করা যায়। আনারস অ্যান্টিবায়োটিক ও প্রদাহবিরোধী হিসাবে কাজ করে। তরমুজ পানিস্বল্পতা পূরণ করে ও প্রস্রাবের সংক্রমণ দূর করে। এ ছাড়া খাওয়া যেতে পারে লাচ্ছি, ঘোল ইত্যাদি। শেষ রাতে টক দইয়ের রায়তা রাখলে হজমে সুবিধা হয়। দই প্রো-বায়োটিক হিসাবে কাজ করে। এর ল্যাক্টোব্যসিলাস ভালো ব্যাকটেরিয়াকে উদ্দীপ্ত করে পরিপাক ক্রিয়াকে সহজতর করে।

কম ক্যালরি গ্রহণ করতে চাইলে নানা ধরনের ফল দিয়ে সালাদ করা যায়। এছাড়া শসা-টমেটোর সালাদও বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। ক্যালরির কথা চিন্তা করলে হিসাব অবশ্যই করতে হবে। যেমন- এক বাটি দুধ-সেমাইতে থাকে ২২০ ক্যালরি, ঘিয়ে ভাঙা জর্দা, সেমাইতে থাকে আরও বেশি। সে জায়গায় এক বাটি ফলের সালাদ খেলে পাওয়া যাবে মাত্র ১০০ ক্যালরি। আবার একটি মুরগির বুকের মাংসের রোস্টে থাকে ২৮০ ক্যালরি। সে জায়গায় বুকের মাংসের চিকেন তন্দুরিতে থাকে ১৮০ ক্যালরি। কাজেই রান্নার উপাদান ও রান্নার ধরনে সামান্য পরিবর্তন এনেও ঈদে স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজপ্রাচ্য খাবার খাওয়া যেতে পারে। এজন্য তেল, ঘি মসলা কম এবং ফল, সালাদ ও সবজির তৈরি খাবার খাওয়া উচিত।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)