অনাস্থা প্রস্তাব দেয়া সদস্যকে শায়েস্তা করতে অপকৌশলে মেতেছেন চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী

 

নিজস্ব প্রতিনিধি : ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ আত্মসাত, ইউপি সদস্যদের সম্মানি না দেয়া, মাসিক সভা না করে ইচ্ছেমতো পরিষদ পরিচালনা এবং জাল-জালিয়াতি ও স্বাক্ষর নকল করে প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন সহ ১২টি অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ইউপি’র ৯জন সদস্য একযোগে জেলা প্রশাসনে অনাস্থা প্রস্তাব দায়েরের পর থেকে প্রতিবাদকারী সদস্যদের শায়েস্তা করতে রীতিমতো অপকৌশলে মেতে উঠেছেন খোদ অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী।
সম্প্রতি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমিসহ ঘর বিতরণ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং অনাস্থা প্রস্তাবকারী ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসেরুল্লাহ আল মামুনকে শায়েস্তা করতে সুবিধাভোগী এক ভিক্ষুক দম্পত্তিকে পুঁজি করে চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন।
বুধবার ভোমরা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাছের মীরের ছেলে দিনমজুর আব্দুল গনি (৫০) ও তার স্ত্রী নবিরা খাতুন (৪৫) কে অনুদান পাইয়ে দেয়ার নাম করে চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী তার আস্থাভাজন আজিজ ও শফি নামের দুই ব্যাক্তির মাধ্যমে সাতক্ষীরায় আদালত চত্বরে ডেকে নিয়ে ইউপি সদস্য নাসেরুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগের কাগজে জোরপূর্বক টিপ সই নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই ভুক্তভোগী দম্পত্তির। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টির পাশাপাশি আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে জনমনে।
সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দিনমজুর আব্দুল গনি সাংবাদিকদের জানান, জমি বা বাসস্থান না থাকায় স্ত্রী নবিরা খাতুন ও সন্তানকে নিয়ে বছরের পর বছর মানুষের দ্বারে দ্বারে আশ্রিত ছিলেন তিনি। নিজে দিনমজুর এবং স্ত্রী নবিরা এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাচ্ছিলেন তারা। সম্প্রতি শ্রীরামপুরে লাবণ্যবতী তীরে বাস্তবায়িত মুজিব বর্ষের একটি জমিসহ ঘর স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসেরুল্লাহ আল মামুনের মাধ্যমে বরাদ্দ পান তিনি। মঙ্গলবার সারা দেশব্যাপী একযোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার হিসেবে মুজিব বর্ষের এসব ঘরের দলিল সুবিধাভোগীদের মাঝে হস্তান্তরের উদ্বোধন করেন। সেমোতাবেক দিনমজুর আব্দুল গণিও তার নামে বরাদ্দকৃত জমিসহ ঘরের দলিল বুঝে পেয়েছেন। জমির দলিল বুঝে পাওয়ার পর ওই রাতেই তার স্ত্রী নবিরা খাতুনের কাছে মোবাইল করেন ভোমরার চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীর অতি আস্থাভাজন শ্রীরামপুর গ্রামের ছামছদ্দীন গাজীর ছেলে আব্দুল আজিজ এবং রজব আলীর ছেলে ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী শফিকুল ওরফে শফি।
আব্দুল গনি বলেন, আজিজ ও শফি তার স্ত্রী নবিরা খাতুনকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব তোমাদের অনুদান পাইয়ে দিবে, তুমি তোমার জাতীয় পরিচয় পত্রটি খুঁজে রাখো, সকালে অনুদানের আবেদন করতে হবে’। এরপর সকাল হতে না হতেই অনুদানের কথা বলে আজিজ ও শফি তার স্ত্রী নবিরাকে নিয়ে সাতক্ষীরায় যায়। পরে সেখানে তারা তার স্ত্রীকে জোর করে ইউপি সদস্য নেছারুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে লিখিত কয়েকটি কাগজে টিপ সই করিয়ে নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় বলেও জানান দিনমজুর আব্দুল গনি।
নবিরা খাতুন বলেন, আজিজ ও শফি আমাকে সাতক্ষীরার আদালত চত্বরে নিয়ে যায়। অনুদানের আবেদন করানোর নাম করে আমাকে আদালত চত্বরে নিয়ে যাওয়ার ব্যপারে জানতে চাইলে আমাকে ধমক দেন আজিজ ও শফি। পরে তারা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আগে থেকে লিখে রাখা কয়েকটি কাগজে টিপ সই করিয়ে নেয় তারা। এসব কাগজের বিষয়ে আমি আজিজ ও শফি’র কাছে জানতে চাইলে তারা আমাকে বলেন, ‘ তোমাদের মেম্বরের পাখনা গজিয়েছে, সে আমাদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তাকে একটু শায়েস্তা করতে হবে’। টিপ সই নেয়ার পরে তারা আমাকে সাতক্ষীরা থেকে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
এব্যাপারে ইউপি সদস্য নেছারুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৯ এপ্রিল চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীর বিরুদ্ধে আমিসহ পরিষদের নয়জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব দায়ের করায় অনুদান দেয়ার নাম করে ওই অশিক্ষিত দম্পত্তিকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরসহ আমাকে শায়েস্তা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী।
এব্যাপারে ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)