সাতক্ষীরা থেকে কাঁচা আম যাচ্ছে ঢাকায়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা আম। মূলত টক জাতীয় খাবার ও আচার তৈরির কাজে এসব আম ব্যবহার করা হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ১০০ মণ কাঁচা আম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব আম পাকলে দাম পাওয়া যায় না। তবে কাঁচা আমের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।
সাতক্ষীরা শহরের বড় বাজারের কাঁচা ও পাকা মাল ব্যবসায়ী মেসার্স আজমীরা ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান জানান, এখন বাজারে আসছে কাঁচা টক আম। এই আম পাকা খাওয়া যায় না, টক লাগে। কাঁচা আম ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের সুলতানপুর বড় বাজারের আম ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা পাইকারি আম বিক্রি করি। প্রতিদিন কয়েক হাজার কেজি কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে, ঢাকায় পাঠাচ্ছি। এগুলোকে সাধারণত গুটি আম বলে ডাকে। আলাদা কোনো নাম নেই এই আমের।
সাতক্ষীরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রজব আলী খাঁ জানান, সাতক্ষীরা থেকে প্রতিদিন পিকআপে ১০০ মণ গুটি টক আম যাচ্ছে রাজধানীতে। রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মিরপুর এলাকায় এসব আম বিক্রি হয়। প্রতি মণ আম বিক্রি করছি আমরা ৮০০ টাকায়। ১৫ দিন আগে থেকে টক আম বিক্রি শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে গত বছরের থেকে তুলনামূলক এ বছর বাজারে আম কম আসছে। কারণ হিসেবে চাষিরা বলছেন, এ বছর গাছে আম কম হয়েছে। কাঁচা আম দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি আচার, জেলি ও জুস তৈরি করে। তবে এ বছর এখনো কোনো কোম্পানি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, গত বছর ৪ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। আবাদ বাড়লেও এ বছর ৫০ ভাগ গাছেই আসেনি আমের মুকুল। জেলায় ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার আমচাষি রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলার তালা সদরের শিবপুর গ্রামের আনার আলী সরদার জানান, আমার ১৫০-২০০টি গোপালভোগ, আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি আমগাছ আছে। এ বছর কোনো গাছেই মুকুল আসেনি, ফলন নেই। তবে গত বছর প্রতি গাছেই প্রচুর আম হয়েছিল।
তালার চরগ্রামের আম ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল লতিফ লিটন। তার আটটি আমবাগান কেনা রয়েছে। এবার লোকসানের মুখে পড়েছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি জানান, আটটি আম বাগানে সব মিলে ১০০-১৫০ ক্যারেট আম হবে না। গাছে কোনো ফলন নেই। এ বছর লোকসান যাবে আমার সাড়ে ৪ লাখ টাকা। শুধু আমার না, ফলন না থাকায় সব আম ব্যবসায়ী এবার লোকসানের মুখে পড়েছেন।
সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, চলতি বছর জেলায় আমের ফলন খুব কম হয়েছে। ৫০ ভাগ গাছে মুকুল আসেনি। আমগাছে যখন মুকুল আসবে, ঠিক তার আগ মুহূর্তে বৃষ্টি হওয়ায় মুকুল আসেনি, গাছে কচি সবুজ পাতা চলে আসে। বৃষ্টির কারণে আমচাষিরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ বছর।
তিনি বলেন, বর্তমানে কাঁচা আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এই আমগুলো দেশি প্রজাতির টক জাতীয় আম। এই আমের তেমন কদর নেই। সে কারণে ব্যবসায়ী ও চাষিরা কাঁচা বিক্রি করে দেয়। কাঁচা আম দিয়ে আচার, টক জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়।