আশাশুনি জমি জবরদখলে বাধা দেওয়ায় একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে জখম
রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপাজেলার দরগাহপুর ইউনিয়নের খড়িয়াটি গ্রামে জমি জবরদখলে বাধা দেওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একই পরিবারের চারজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় তিন দিনেও কোন আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ওইসব আসামীরা ভাড়াটিয়া লোকজনদের নিয়ে আবারো ওই জমি জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
খড়িয়াটি গ্রামের প্রভাস সরকারের ছেলে সুনীল সরকার জানান, তার ঠাকুরদাদা শিবপদ সরকারের কাছ থেকে ১৯৮৮ সালে ৩৩ শতক জমি কেনেন একই গ্রামের গহর আলী গাজী। পরবর্তীতে ওই জমি তিনি তার তিন ছেলে আসাফুর, সাইফুল ও আব্দুল মজিদের নামে দানপত্র লিখে দেন। আসাফুর, ১৯৯৯ সালে সাইফুল ও মজিদ ওই জমি তার (সুনীল), চিত্তরঞ্জন সরকারসহ ছয় জনের নামে লিখে দেন। সম্মতি হিসেবে ওই দলিলে গহর আলী গাজী সনাক্তকারি হিসেবে সাক্ষর করে। ১৯৯৯ সালের দলিলের তথ্য গোপন করে ২০০২ সালে তিন ছেলের নামে দানপত্র করে দেওয়া ওই ৩৩ শতক জমি ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেন গহর গাজী। আদালতের নোটিশ গোপন করে একতরফা শুনানী করে ২০০৩ সালে ডিক্রী পান গহর গাজী। পরবর্তীতে ওই ডিক্রী মূলে ৩৩ শতক জমি নিজের মেয়ে তালার কানাইদিয়ার রাশিদার কাছে বিক্রি করেন। ২০১০ সালে রাশিদা ওই জমি খড়িয়াটির বারিক গাজী, মঈনুর গাজীসহ আটজনের কাছে বিক্রি করেন। খবর পেয়ে তারা আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা করে গহর গাজীর আদালতের ডিক্রীর আদেশ স্থগিত করেন। এ খবর পাওয়ার পর বারিক গাজী, মঈনুর গাজী ও তাদের স্বজনরা জমি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজ আলীকে অবহিত করা হয়। গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মঈনুর গাজী ও তাদের লোকজন জোরপূর্বক ওই জমি ঘেরা ও বেড়া দিয়ে জবরদখল করেত যান। বাধা দেওয়ায় তার কাকা চিত্তরঞ্জন সরকার, কাকিমা তারকী রানী সরকার, মিনতি রানী সরকার ও কাকাত ভাই নয়ন সরকারকে লোহার রড ও দা দিয়ে টিপিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়।
স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কাকা চিত্তরঞ্জন ও কাকিমা তারকী রানী সরকারকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সুনীল সরকার আরো জানান, তার কাকা, কাকিমাসহ চার জনের উপর হামলার ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে শনিবার রাতেই মঈনুরসহ ১২ জনের নাম উলেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১২ জনের নামে থানায় মামলা করেন। তাদের গ্রামটি প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকা হওয়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়েও একজন আসামীকে ধরতে পারেনি। রোববার রাতভোর পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। সোমবার ভোরে পুলিশ চলে যাওয়ার পর আসামীরা অন্যস্থান থেকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে এসে আবারো তাদের জমি জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি তারা (সুনীল)যাতে বাড়ি থেকে বের না হতে পারে সেজন্য আসামীরা বাড়ি ঘরের চারি দিকে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুলিশ না আসায় তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
দরগাহপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজ আলী জানান, খড়িয়াটি গ্রামটি তিনটি উপজেলার সীমান্ত হওয়ায় পুলিশের ইচ্ছা থাকার পরও আসামী ধরতে পারছে না। তবে সুনীল সরকার ও তাদের শরীকদের বৈধ জমি জবরদখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। জবরদখলের বিরুদ্ধে তারা সজাগ রয়েছেন।
এ ব্যাপারে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান জানান, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক গোলাম মোস্তফা আসামী ধরার ব্যাপারে সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে চাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হবে।