দেবহাটায় হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্পের শিল্পকর্ম
দেবহাটা প্রতিনিধি :
মানুষ দক্ষতা দিয়েই তার সকল শিল্পকর্ম সাজিয়ে তোলে। শিল্পকর্মের মধ্যে মৃৎশিল্প অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
প্রাচীন ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে লক্ষ্য করা যায় যে, আগুন জ্বালাতে না পারার আগের কথা, মৃৎশিল্পের কারুকার্য খচিত শিল্পকর্ম যা আমাদের গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। মানুষ জীবিকা নির্বাহের উপকরণ হিসেবে সৃষ্টি করেছিল সেই অনেক বছর আগে। মানুষের প্রাচীনতম শিল্পক
র্মের মধ্যে নিঃসন্দেহে মৃৎশিল্প অনেক আকর্ষণীয়। মাটি আর পানির উপাদানের মিশ্রণের নিরন্তর প্রবাহই মানুষকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল প্রথম মৃৎশিল্প তৈরির জন্য।
পরবর্তীতে আগুনের ব্যবহার আয়ত্তে এনে তৈরিকৃত মৃৎপাত্র পুড়িয়ে সেটাকে ব্যবহারের অধিকতর উপযোগী করে তুলেছে। শিল্পীর রং তুলি যেমন করে নির্জীব কোন দৃশ্যকে নান্দনিকতা দেয়, তেমনি কুমার তার হাতের ¯পর্শে মাটিকে করে তোলে তৈজসপত্রে। যার নন্দনতত্ত্বর মোহে নারীরা ঘরকে করে তুলছে আরও বেশি সুশোভিত। যুগ যুগ ধরে বংশ পর¤পরায় নিজেদের একনিষ্ঠতা ও হাতের সুনিপুণতা দিয়ে তৈরি করে আসছে হাজারো রকমের মাটির পাত্র।
হাঁড়ি, বাসন-কোসন, ঘটি-বাটি, খেলনা, পুতুল, ফুলদানি, টব, চায়ের কাপ, ফুলের টব অন্যতম। বিশ্বায়নের যুগে মানুষের রুচির পরিবর্তনের ফলে এই মাটির শিল্পের চাহিদা অনেক মাত্রায় কমে গেছে। বর্তমানে এই অভিরুচির সংখ্যা কিছু কর্পোরেটদের হাত ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানের আমলে বিভিন্ন তৈজসপত্র ব্যাপক পরিসরে মাটির শিল্পের স্থান দখল করে নিলেও গ্রামবাংলার অধিকাংশ মানুষ এখনও মাটির পাত্র ব্যবহারে তাদের পুরানো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। মাটির শিল্পের ব্যবহার একদিকে স্বাস্থ্যসম্মত, অন্যদিকে কম ব্যয়বহুল। এছাড়াও বিশেষ কিছু মাটির পাত্রের জনপ্রিয়তা সর্বকালীন। মাটির শিল্প বলতে আজ আর শুধু শখের হাঁড়ি,
মাটির বদনা কিংবা রান্নার পাতিলকেই বোঝায় না।
অতি উন্নতমানের আধুনিক ও রুচিশীল তৈজসপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রীও আজ মাটির পাত্রের শিল্পীদের হাতে তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাটির শিল্প কুটির শিল্পের গন্ডি পেরিয়ে যন্ত্রচালিত আধুনিক ক্ষুদ্রশিল্পের রূপ পরিগ্রহ করেছে। যন্ত্রচালিত কারখানায় তৈরি উন্নতমানের মসৃণ মাটির পাত্র অতি সহজেই আধুনিক ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এই মৃৎশিল্পের পেছনে অর্থ দিলে হয়ত কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের জিডিপিতে অবদান রাখার মতো কিছু অর্থ আসত। আমাদের নীতি হলো, নিজে ভাল থাকলেই পৃথিবী ঠিক। বাস্তবতা তার ভিনগ্রহে চলে।
এই মৃৎশিল্পে বর্তমানে কয়েক লাখ লোক কর্মরত রয়েছেন। যাদের অবদান জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বেরও দাবি রাখে। তবে এই দেশীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ইতোমধ্যে বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগিক ক্ষেত্র কতটুকু সফলতা পেয়েছে সেটাই খতিয়ে দেখার বিষয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা, বিসিকসহ বিভিন্ন সংস্থা এই শিল্পের শিল্পীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, মান উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। বাঙালীর ঐতিহ্যের স্মৃতিবাহকদের মধ্যে অন্যতম হলো মৃৎশিল্প। যাদের কল্পনার রঙের বিন্যাস, কারিগরি দক্ষতা, বাস্তবধর্মী আঙ্গিক, সৌম্য আর সূ²তার ব্যঞ্জনায় মৃৎশিল্পীরা সমাদৃত।
পোড়া মাটির নানাবিধ কাজ, গৃহস্থালির নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, পুতুল, খেলনা, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, টপ শো সহ অসংখ্য জিনিস আজও কুমার শালায় তৈরি হয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছে। সময় মাটির তৈরি হাঁড়ি বা গণেশের মূর্তি দিলে বিনিময়ে ওই পাত্রে বা মূর্তির পেটে যত চাল ধরে ততটাই দেয়া হতো শিল্পীকে। আজ আর সে চাল জোটে না, বিনিময়ে জোটে সামান্য অর্থ। তারপরও দেশের কুমাররা ধরে রেখেছেন তাঁদের নিজস্ব ঐতিহ্য।
বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া শিল্প যেন আবার তাদের ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বলে মন্তব্য করেছেন দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার আরতী রানী পাল তিনি বলেন, জন্মের পর কেপল শিখেছি এই কাজ। এক সময় প্রচুর বিক্রী হত এখন আর সেভাবে বিক্রী হয় না। সে কারণে এখন নায্য মূল্য ও পাই না, তৈরিতে যে হারে কষ্ট হয়, সময় লাগে সেহারে এখন টাকা পাই না। ফলে কোন কোন সময় পরিবার পরিজন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
কথা হয় পারুলিয়ার কুমার পল্লীর প্রধান কারিগর কালিদাস পালের এর সাথে তিনি বলেন, বাবা মা শিখিয়েছল এই কাজ সে কারনে এই কাজ করে জীবন চালাতে হচ্ছে। সে ভাবে কাজ হয় না এখন আর। এখন আর বিক্রী ও নেই তেমন যার ফলে তৈরি ও কম করছি। যা তৈরি করি তা বিক্রী করে সংসার চালানো দায়।