নতুন ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুদের দ্বিতীয়বার ভাবাবে: পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে পশ্চিমা বিরোধ তুঙ্গে। ইউক্রেনে ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ সেনা না মোতায়েন করলেও অস্ত্র দিয়ে দেশটিকে সহযোগিতা করছে তারা। রাশিয়ার মতে, পশ্চিমারাই ইউক্রেনে অস্ত্র দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। এ বিষয়ে পশ্চিমাদের হুমকিও দিয়েছে রাশিয়া।

এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা গেছে, রাশিয়া সফলভাবে সারমাট নামের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করেছে রাশিয়া।  এ ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে গর্ব করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, সারমাট মস্কোর বিরুদ্ধে শত্রুদের দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করবে।

নতুন (ক্ষেপণাস্ত্রের) সর্বোচ্চ কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে সক্ষম।

রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমের প্লেসেটস্ক থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, যা সফলভাবে দেশটির পূর্বের কামচাটকা উপদ্বীপে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। টেলিভিশনে পুতিন পরীক্ষাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

পুতিন টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে সেনাদের উদ্দেশে বলেন, সারমাট আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। সত্যিই এই অনন্য অস্ত্র আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতাকে বাড়াবে, বাইরের হুমকি থেকে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং যারা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে আমাদের দেশকে হুমকি দেয়ার চেষ্টা করে তাদের দুবার ভাবতে বাধ্য করবে।

ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্যানুসারে, রাশিয়া আশা করছে, তাদের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সারমাটে ১০টি বা তারও বেশি ওয়ারহেড মোতায়েন করতে পারবে।

রাশিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে, তাই এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, পশ্চিমের জন্য বিস্মিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। তবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চলাকালীন এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে।

পুতিন জানিয়েছেন, নতুন (ক্ষেপণাস্ত্রের) সর্বোচ্চ কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে সক্ষম।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মহাকাশ সংস্থার প্রধান এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ন্যাটোর জন্য উপহার হিসেবে অভিহিত করেছেন।

রুশ আইসিবিএম পরীক্ষা নিয়ে বুধবার পেন্টাগন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে হুমকি হিসেবে দেখছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, মস্কো ২০১১ সালের স্টার্ট চুক্তির অধীনে তার বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে ওয়াশিংটনকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে অবহিত করেছে। পরীক্ষা নিয়মিত, এখানে আশ্চর্যজনক কিছু ছিল না। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যাতে কোনো উত্তেজনা তৈরি না হয়, তাই ২ মার্চ মিনিটম্যান-৩ নামের আইসিবিএমের একটি নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলছেন, পুতিন যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা সাধারণত কোনো দায়িত্বশীল পারমাণবিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা করা হয় না।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।

ইউক্রেনকে অসামরিকায়ন ও নাৎসিমুক্তকরণ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)