স্ত্রীর চুক্তিতে স্বামী অপহরণ!
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় স্ত্রীর আর্থিক চুক্তিতে মো. রেজাউল করিম (৩৪) নামে স্বামীকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার সকালে উদ্ধারের পর দুপুরে লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ভিকটিম রেজাউল ও পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- ওই নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক ব্যাংক কলোনির জি/৫৮ এলাকার মৃত ইউনুছ আলীর পুত্র আতিকুল ইসলাম মিঠু (৪২), সাভার নামা গেন্ডা জি১/১ এলাকার আবুল খায়েরের পুত্র নাসির আহাম্মেদ (৩৮), গাজীপুরের সারদাগঞ্জ এলাকার কাশেম আলীর পুত্র আবুল কাইয়ুম (৩২), সাভার গেন্ডা এলাকার আ. সালামের পুত্র শাহিদুল হক দিপু ওরফে পাখি (৩৮), বংশাল চানখার পুল এলাকার ফিরোজ মিয়ার পুত্র সাজিদ হাসান বাবু (৪২) ও সাভার রাজাশন এলাকার তাহের সরকারের পুত্র আ. হাকিম (৫৫)। দীর্ঘদিন ধরে তারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের নামে টর্চারসেল চালিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছিল বলে জানায় পুলিশ।
সূত্র জানায়, সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়নে উত্তর আয়নাপুর গ্রামের মো. বহির উদ্দিনের পুত্র মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে দৌলতপুর এলাকার তানিয়া বেগমর বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের জের ধরে কয়েক দিন আগে স্বামীকে উচিৎ শিক্ষা দেবে জানিয়ে পালিয়ে যায় তানিয়া বেগম।
পরে স্বামীকে ধরে নিয়ে শিক্ষা দিতে আর্থিক চুক্তি করেন সাভার কথিত রিহাব সেন্টারের ওই সব কর্মকর্তার সঙ্গে। উত্তর আয়নাপুর বাশার মেম্বার বাড়ির সামনে স্বামীর যাতায়াতের রাস্তায় গত ১৪ এপ্রিল বিকালে ওতপেতে থাকে তানিয়া ও তার ভাড়াটে বাহিনী রিহাবের লোকজন। দেখামাত্রই তানিয়ার ইঙ্গিতে রেজাউলকে দ্রুত গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় সাভার রিহাব সেন্টারে। সেখানে নিয়ে চালানো হয় শারীরিক কঠোর নির্যাতন।
এদিকে বাড়িতে ফেরেনি বলে খুঁজতে থাকে রেজাউলের পরিবার। গভীর রাতে সাটুরিয়া থানায় হাজির হয়ে বিষয়টি অবহিত করেন রেজাউলের বাবা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয় অপহরণের ঘটনা। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্ধানের পর সাটুরিয়া থানার এসআই মোকতার হোসেনের নেতৃত্বে সাভার রাজালাখ ফার্ম এলাকার ‘আমার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে’ অভিযান চালায়।
উদ্ধার হওয়া রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, স্ত্রী তানিয়ার দেখানো মতে ওরা আমাকে আচমকা গাড়িতে তুলে নেয়। জানতে চাইলে বলে ওরা প্রশাসনের লোক। মাথায় গরম পানি ঢেলে, সিগারেটের ছ্যাঁকাসহ বিভিন্নভাবে মারপিট করেছে। ওই সেন্টারে অন্যকক্ষে একাধিক মানুষকে নির্যাতন ও কান্নার শব্দ শুনেছেন বলে জানান তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাটুরিয়া থানার ওসি মো.আশরাফুল আলম যুগান্তরকে বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো.গোলাম আজাদ খানের নির্দেশনা মতো অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার, অপহরণে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার ও ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। কথিত রিহাব সেন্টারের কোনো বৈধ কাগজপত্র আসামিরা দেখাতে পারেননি। সাটুরিয়া থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করে আসামিদের মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল আদালতে পাঠানো হয়েছে।