সাতক্ষীরায় ডোবায় বিষ দিয়ে মাছ নিধন
রঘুনাথ খাঁঃ
বৃহষ্পতিবার রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার
কুশখালি ইউনিয়নের আড়–য়াখালি গ্রামের আনছার ভিডিপি
কর্মী নুরুল ইসলামের ডোবায় বিষ দিয়ে লক্ষাধিক টাকার মাছ
নিধনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ি
আব্দুস সালামকে শুক্রবার ধান খেত থেকে ডেকে এনে স্থানীয়
ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম পুলিশে সোপর্দ করেছেন। সৈয়লদ্দিন
নামের এক ঘের মালিককে চোর হিসেবে আখ্যায়িত করে
বৃহষ্পতিবার রাতে তার ঘেরের বাসায় হামলা চালানোর দু’ দিনেও
তার সন্ধান মেলেনি।
অভিযোগ, মনিরুল মেম্বর তার নির্বাচনী প্রতিপক্ষদের নুরুল
ইসলামের পুকুরে বিষ দেওয়ার ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে জড়ানোর চেষ্টা
করছেন।
আড়–য়াখালি গ্রামের আনছার ভিডিপি কর্মী নুরুল ইসলাম
জানান, তিনি চালাই মাছ কিনে বড় করে বিক্রি করে থাকেন।
গ্রামের দক্ষিণ পশ্চিম বিলে তার মাছের পুকুর থেকে ৪০০ গজ দূরে
ছৈলদ্দিন নামের এক ব্যক্তির ধান খেতসহ মাছের পুকুর রয়েছে।
বৃহষ্পতিবার রাত ৯টার দিকে তিনি তার ডোবার পাশে পাহারা
ঘরে যান। ডোবায় টর্চ লঅইট মেরে তিনি মাছ ভাসতে দেখেন।
ডোবার দক্ষিণপাশে কলাগাছের নীচে ছয়লদ্দিনকে পায়খানা করতে
দেখেন। সেখানে যাওয়ার পর ছয়লদ্দিন চলে যায়। তার পায়থানার পাশে
একটি বিষের কৌটা পড়ে থাকতে দেখেন । মাছ মারা যাওয়ার কথা
চিৎকার করলে ইয়ার আলীর ছেলে মাছ ব্যবসায়ি সালামসহ কয়েকজন
ঘটনাস্থলে আসেন। সন্দেহ হওয়ায় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম
গ্রাম পুলিশ মফিজুল ইসলামের মাধ্যমে ধান খেত থেকে ডেকে
এনে সালামকে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
ছৈলদ্দিনকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মনিরুল মেম্বর চেষ্টা করছেন।
তবে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন,
ছৈলদ্দিনের সাথে তার কোন বিরোধ নেই। মনিরুল মেম্বর চাচাত ভাই
উলে-খ করে নুরুল বলেন, তার কোন প্রতিপক্ষের দারা প্রভাবিত হয়ে ছৈলদ্দিন তার ডোবায় বিষ দিতে পারে। তরে সালামকে বিষ দেওয়ার
সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত নন তিনি।
আড়–য়াখালি গ্রামের সুফিয়া খাতুন জানান, তার ছেলে বিদেশে
থাকায় তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করে আসছে
মনিরুল মেম্মর। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় পলাশ, সাজ্জাদ ও
মিঠুনদের সঙ্গে ২০ শতক জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে
নেপথ্যে থেকে গত তিন বছর যাবৎ পুকুরের মাছ লুট করিয়েছে
মনিরুল ইসলাম। মনিরুল ইসলামের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তার
স্বামীকে নুরুল ইসলামের পুকুরে বিষ দেওয়ার ঘটনায় মামলা দেওয়া
হয়েছে। তার স্বামীকে ফাঁসাতে ঘেরের বাসায় হামলা করে
আতিয়ারের ছেলে হাসান ছৈলদ্দিনের মোবাইল ও পুরাতন জুতো
নুুরুলের পুকুর পাড় থেকে উদ্ধার দেখিয়ে পুলিশের কাছে জমা
দিয়েছে। তবে ছৈলদ্দিনকে গত শনিবার পর্যন্ত সন্ধান পাননি বলে
দাবি করেন সুফিয়া।
আব্দুস সালামের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার জানান, ২০১৯ সালে তার
স্বামীকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি
থেকে ধরে নিয়ে যেয়ে দু’ লাখ টাকা দাবি করে ৩০ হাজার টাকা
নিয়ে ছেড়ে দেয় মনিরুল মেম্বব। এর তিন সপ্তাহ না যেতেই
মনিরুলের ইশারায় সদর থানার তদন্ত ওসি আবুল কালাম জোর পূর্বক
ঘরের মধ্যে ঢুকে তার স্বামীকে ধরে আগরদাঁড়ি মাদ্রাসায় নিয়ে
কাঁঠাল গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালান। তাকে
ছাড়িয়ে আনতে টাকা দাবি করে মনিরুল ইসলাম। পরদিন তার চাচা
মারা যাওয়ায় সকাল ১০টার দিকে সালামকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে
মনিরুল ইসলাম। তার স্বামী একজন মাছ ব্যবসায়ি উলে-খ করে
সাবিকুন্নাহার বলেন, তারা মনিরুল মেম্বরকে ভোট না দিয়ে
হায়দারকে ভোট দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতে নুরুলের ডোবায় মাছ
মরে যাওয়ার ঘটনায় ধান খেতে কর্মরত অবস্থায় গ্রাম পুলিশ দিয়ে
ডেকে এনে উপপরিদর্শক শাহজালালের হাতে তুলে দিয়েছে মনিরুল।
রাতে সালামকে উদ্দেশ্য করে মনিরুলের ভাই মতিন অকথ্য ভাসায়
গালিগালাজ করে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আড়–য়াখালি গ্রামের কয়েকজন জানান,
গ্রামের মর্জিনার সঙ্গে পায়রাডাঙার মিথুনের বিয়ে হয় কয়েক
বছর আগে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে
বিরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশে দেওয়ার কথা বলে মর্জিনার কাছ
থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করে মনিরুল। নাশকতার মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২০১৯ সালে খালপারের আনোরুলের কাছ থেকে এক
লাখ টাকা নেন মনিরুল। একই সময়ে স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক
কাথণ্ডা গ্রামের সাহেব আলীকে নাশকতার মামলায় ঢুকিয়ে
চাকুরিচ্যুত করার ভয় দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা নেন মনিরুল ও রকিব
মাষ্টার। এ ছাড়া প্রশাসনে প্রবাব খাটিয়ে গত চার বছরে মনিরুল
গ্রামের বিভিন্ন লোকজনের নাশকতার মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয়
দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম শনিবার বিকেলে এ
প্রতিবেদকে জানান, ছইলদ্দিন ও সালামকে পুকুর পাড়ে বসে
থাকতে দেখেছেন নুরুল ইসলাম। সেকারণে তারাই ডোবায় বিষ
দিয়েছে বলে নুরুল মনে করে। এ ছাড়া সালাম, ছৈলদ্দিন এর সাথে
ভোট নিয়ে তার কোন বিরোধ নেই। নাশকতার মামলায় জড়িয়ে
টাকা আদায়ের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
তাদের এলাকায় পহেলা রোজা থেকে পরবর্তী কয়েক দিনে শ্রীবাস
বাছাড়, তার ভাই কাঞ্চন বাছাড়, শওকত হোসেন, মশিয়ার, গোলাম,
নাজমুলসহ কয়েকজনের ডোবায় বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলা
হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ওই সব ঘটনায় থানায় কোন
অভিযোগ করা হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক শাহজালাল জানান, সালামকে তার
কাছে তুলে দেওয়ার পর তাকে ডোবায় বিষ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত
থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়েছে। মনিরুল মেম্বর যেভাবে
এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে চলেছে তাতে নিরীহ মানুষের হয়রানি বন্ধ
করতে সব ঘটনারই যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। নুরুল ইসলামের
ডোবায় বিষ দিয়ে মাছ মারার ঘটনায় মালিক নিজেই বাদি হয়ে
সালাম ও ছৈলদ্দিনের নাম উলে-খসহ ৩/৪ জনের নাম উলে-খ করে শুক্রবার
থানায় মামলা করেছে।