পাকিস্তানের মতো নির্বাচন ব্যবস্থা চান ফখরুলও

অনলাইন ডেস্ক :

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দেশে পাকিস্তানের নির্বাচন ব্যবস্থা চান। তিনি বলেছেন, ড. আকবর আলি খান বিএনপি করেন না। কিন্তু তিনিও বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এটা শুধু উনার নয়, অনেকেরই কথা। পাকিস্তানে এত টালমাটাল। এরপরও ওখানে নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মওলানা ভাসানী বিরচিত মাও সে তুং এর দেশে’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে ফখরুল এসব কথা বলেন।

শনিবার এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের অধীন নির্বাচন হলে নির্বাহী বিভাগ ক্ষমতাসীনদের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারে না, এমনকি তারা ভবিষ্যৎ বেনিফিট (সুবিধা) নেওয়ার চিন্তা করে। তাই বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থায় শুধু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ভালো নির্বাচনের জন্য পাকিস্তানের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা অনুসরণ করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে, যেখানে সাবেক প্রধান বিচারপতি সরকারপ্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত থাকেন। নির্বাচনকালীন সরকারসহ জাতীয় পর্যায়ে অমীমাংশিত বিষয়ে গণভোটের বিধান চালু করলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজতর হবে।’

দেশের মেগা প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মহেশখালী ভাসমান এলএমএনজি টার্মিনাল থেকে হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।  এভাবে প্রত্যেকটা প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ একটা দুঃসহ জীবন পার করছে। এটা সহ্য করা যাচ্ছে না। এই যন্ত্রণা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন একটা অভ্যুত্থানের সৃষ্টি করতে হবে, যাতে দেশ ও মানুষের মুক্তি অর্জন করতে পারি।

পাঠ্যবইয়ে একজনেরই নাম- এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন শিশুদের জন্য যে পাঠ্যবই করা হয়েছে সেখানে এক ব্যক্তি ছাড়া কারো নাম নেই। এদেশের স্বাধীনতা, এদেশের সংগ্রাম, এদেশের মানুষের পরিবর্তনের যে ব্যবস্থা এর কোনোটাতেই কারো কোনো অবদান নেই শুধু একজনের অবদান ছাড়া। মওলানা ভাসানীর অবদানও এ সরকার স্বীকার করতে চায় না।

আওয়ামী লীগ কেন মওলানা ভাসানীকে স্বীকার করে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। অথচ তারা ভাসানীকে একবারের জন্যও স্বীকার করতে চায় না। মওলানা ভাসানী বাংলাদেশের গরিব–দুখী, মেহনতি মানুষের জন্য তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার অবদানকে স্মরণে রাখতে মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন করার প্রস্তাব করেন তিনি।

বিএনপির পতাকা তারেক রহমানের হাতে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের গোটা জাতি বলছে- তারেক রহমানকে বলছে, ক্যারি দ্যা ফ্লাগ অব ইউর ফাদার এন্ড মাদার। জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দর্শনকে বহন করে নিয়ে গেছেন খালেদা জিয়া। এই পতাকা এখন তুলে দেওয়ার দায়িত্ব এসেছে তারেক রহমানের ওপরে। সেই দায়িত্ব তিনি পালনও করছেন। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে তিনি তা পালন করতে সক্ষম হবেন।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট কালচারাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘মওলানা ভাসানী বিরচিত মাও সে তুং এর দেশে’ শীর্ষক গ্রন্থের নতুন সংস্করনের প্রকাশনার মোড়ক উম্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

‘শোভা প্রকাশনী’র এই গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন কবি আবদুল হাই শিকদার। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপাস্থাপন করেন সালেহ মাহমুদ রিয়াদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন- শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নজমূল হক নান্নু, কবি আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইফতিখায়রুল আলম মাসউদ, সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খান ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)