হাজারো মানুষ অশ্রুসিক্ত ভালবাসায় চির বিদায় জানালেন কলারোয়ার সাহেব খ্যাত প্রিয় নেতাকে
কামরুল হাসানঃ
হাজারো মানুষ অশ্রুসিক্ত ভালবাসায় চির বিদায় জানালেন কলারোয়ার সাহেব খ্যাত প্রিয় নেতা বি.এম নজরুল ইসলামকে।
এ যেন কলারোয়ার এক প্রিয় অভিভাবকের প্রস্থান। চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। হাজারো মানুষ জানালেন শেষ বিদায়।
‘নজরুল সাহেব’ রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে ছিলেন দলমতনির্বিশেষে সর্বজনবিদিত ব্যক্তিত্ব।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। কলারোয়া পাইলট হাইস্কুল ফুটবল মাঠে জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয় বিএম নজরুল ইসলামের লাশ। সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
পরে সেখান জানাজাপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন প্রয়াতের একমাত্র পুত্র বিএম রবিউল ইসলাম রিপন, শ্যালক আলহাজ আব্দুর রহিম, তালা-কলারোয়ার সংসদ সদস্য এডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক এমপি একেএম ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নজরুল ইসলাম, কলারোয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এমএ ফারুক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, পৌর মেয়র প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মৃধা, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার।
আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রহমান ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল আলম মল্লিক রবি।
স্মরণকালের বৃহৎ এই জানাজায় নানান বয়সী ও পেশার অসংখ্য মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা নামাজে ইমামতি করেন কলারোয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলহাজ মাওলানা আব্দুল বারী।
এর আগে প্রয়াতের খাটিয়ায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দ।
পরে কলারোয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে প্রয়াতের বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হয়।
আপামর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার চিরচেনা এই সজ্জন মানুষটি বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ বিএম নজরুল ইসলাম ছিলেন সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সাবেক আহবায়ক ও বর্তমান সহ.সভাপতি এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
একই সাথে বহু সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিলো তার হাতের ছোঁয়া ও সম্পৃক্ততা।
বিএম নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে অনেকে বলেন, ‘নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়, কলারোয়াবাসী একজন অভিভাবক হারালো। যেটি সর্বস্তরের জনগণের জন্য বেদনা দায়ক। মহান আল্লাহ্ পাক তাকে বেহেশত দান করুন।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) পবিত্র মাহে রমজানের ৫ম রোজায় বেলা ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকাস্থ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলহাজ বিএম নজরুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না..রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, ৪ কন্যা ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিএম নজরুল ইসলাম হার্টের বাইপাস সার্জারিরত অবস্থায় হঠাৎ কিডনি ও হার্টের সমস্যা অনুভব করায় ডাক্তার শফিকুল ইসলামের পরামর্শে দ্রুততার সাথে বিমানযোগে গত বুধবার রাতে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বিএম নজরুল ইসলাম নিজে একটি দলে সম্পৃক্ত থাকলেও দলের ঊর্দ্ধে থেকে তিনি ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।
Please follow and like us: