রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি-পাসপোর্ট, নিরাপত্তা হুমকির মুখে

নিউজ ডেস্ক:

অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। যা দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করেন সচেতন মহল।

সাড়ে চার বছর আগে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ায় প্রবেশ করে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয় এবং ৩৪টি অস্থায়ী ক্যাম্পে তাদের বাসস্থান, আহার, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়।

শুরুতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ। এখন বংশবৃদ্ধির পর তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত আছে। কিন্তু মিয়ানমার এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি।

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এদেশের জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং করেই চলেছে। রোহিঙ্গারা তাদের জন্য নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে বনাঞ্চলের গাছ কাটছে, পাহাড় কাটছে এবং সেখানে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। তারা কক্সবাজার জেলার দক্ষিণাঞ্চলে ভূপ্রকৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করছে।

একই সঙ্গে মাদক পাচার ও মাদকের ব্যবসা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।

এবার জানা গেল, তারা এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে অবৈধ উপায়ে। এ কাজে তারা দুর্নীতিপরায়ণ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তা পাচ্ছে। অবৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করে বেশকিছু রোহিঙ্গা এরই মধ্যেই অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিমত, বাংলাদেসশের এনআইডি ও পাসপোর্ট কেবল এদেশের নাগরিকরাই পেতে পারেন। এনআইডি কার্ডধারী নাগরিকরা দেশের সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অধিকারী। এনআইডি কার্ড থাকলে নাগরিকরা পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন এবং পাসপোর্ট নিয়ে অন্য দেশে যেতে পারেন।

অপর দিকে বিদেশি রোহিঙ্গারা কেবল বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড নয়, পাসপোর্টও সংগ্রহ করেছে। খবরটি খুবই উদ্বেগজনক।

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি খুব সহজসরল নয়। পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করে এই কার্ড পাওয়া যায়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর তথ্য সংগ্রহ, পরিচিতি যাচাই, উপজেলা সার্ভারে প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রভৃতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদনকারীকে এনআইডি কার্ড দেওয়া হয়। এজন্য বেশ সময়ও লাগে।

চট্টগ্রামে নকল এনআইডি ও পাসপোর্ট করে দেওয়ার কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সুসংগঠিত একটি চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। সম্প্রতি এ চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। গত বছর এ চক্রের অন্তত ১৫ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পাসপোর্ট অফিস থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপ, জাল বা ভুয়া এনআইডি, ভুয়া পাসপোর্ট প্রভৃতি।

এ চক্র মাত্র পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে ভুয়া এনআইডি সরবরাহ করেছে বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়।  কয়েক হাজার টাকার বিনিময়েই নাকি রোহিঙ্গারা এই চক্রের কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টও সংগ্রহ করেছে। ইসি ও পাসপোর্ট বিভাগের কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মচারী এ ধরনের অপকর্মে জড়িত বলে ধারণা সচেতন মহলের।

স্থানীয়রা জানান, ভুয়া এনআইডি বা পাসপোর্ট তৈরির কাজে জড়িত একটি চক্র ধরা পড়লেও এমন আরো অনেক চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। এ ধরনের সব চক্রকে অবিলম্বে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। তা না হলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের হুমকি ও বিপদের মধ্যে পড়তে হতে পারে।

বাংলাদেশের নাগরিকদের নতুন পাসপোর্ট পেতে বা পাসপোর্ট নবায়ন করতে কত ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়, ভুক্তভোগী মাত্রই তা জানেন। পাসপোর্ট অফিসগুলো দালালদের দখলে চলে গেছে-এমন খবর গণমাধ্যমে প্রায়ই আসছে। দালালদের টাকা দিলে পাসপোর্ট পাওয়া যায় নির্ধারিত সময়ে। দালাল না ধরে কেউ যদি সরাসরি পাসপোর্টের আবেদন জমা দেন, তিনি কতদিনে তা পাবেন বলা যায় না। তদুপরি বিভিন্নভাবে আবেদনকারীদের হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণমাধ্যমে এসব দুর্নীতির খবর এলেও এর কোনো প্রতিকার নেই। অথচ বিদেশি রোহিঙ্গারা এদেশের মাটিতে বসে এনআইডি পাচ্ছে, পাসপোর্ট পাচ্ছে, বিদেশেও চলে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও আইসের মতো মারাত্মক ধরনের মাদকদ্রব্য চোরাচালান করে আনছে। এ কারণে দেশে মাদকের ব্যবসা জমজমাট। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে খুন-খারাবির ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)