ইউক্রেন থেকে ঘরে ফিরেছেন সাতক্ষীরার নাবিক মনসুরুল আমিন খান

নিজস্ব  প্রতিনিধিঃ

এ যেন ঘন আঁধারের মধ্যে হঠাৎ চাঁদের আলো দেখতে
পাওয়া। সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর হতাশার অবসান ঘটেছে কারন তাদের প্রিয়
সন্তানটি যুদ্ধক্ষেত্র মাড়িয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছে। সাতক্ষীরার ‘এখানেই
নোঙর’ বাড়িটি যেন আলো ঝলমল করে উঠলো তাদের নাবিক সন্তান মনসুরুল
আমিন খান গিনির উপস্থিতিতে। বৃহস্পতিবার এ দৃশ্য দেখা গেল সাতক্ষীরা শহরের
নারকেলতলার সেই ‘এখানেই নোঙর’ বাড়িতে। এর আগে তিনি বুধবার রাত
সাড়ে ১০ টার দিকে বাড়িতে ফেরেন।
দুই মাস থেকে আট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার
সমৃদ্ধি’র ২৯ জন নাবিকের একজন রাশিয়ার বোমা হামলায় প্রান হারিয়েছেন আর
ফিরে এসেছেন বাকি ২৮ জন। তাদেরই একজন সাতক্ষীরা শহরের নুরুল আমিন খান
ওরফে সেলিম খানের নাবিক পুত্র মনসুরুল আমিন খান গিনি।
‘গত ২ মার্চ স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরনে কেঁপে
উঠি আমরা। উপরে গিয়ে দেখি বিস্ফোরন হয়েছে। ধোয়া উড়ছে, আগুন জ¦লছে।
আমরা দ্রæত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করলেও ততক্ষনে হারিয়েছি আমাদের সহকর্মী
এক নাবিককে। তাকে রেখেই আমাদের দেশে ফিরতে হলো’।
ইউক্রেনে অলিভিয়া বন্দরে নোঙর করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকরা জাহাজ থেকে
দ্রæত নেমে আসেন। এরপর এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। স্থানীয়ভাবে
একটি বোট এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিরাপদ স্থানে রাখার পর আরও
নিরাপত্তার জন্য তাদের রাখা হয় বাংকারে।
‘আমরা আগুন দেখেছি, জাহাজ বিধ্বস্ত হতে দেখেছি, আমরা মৃত্যু দেখেছি’
এমন মন্তব্য করে মনসুরুল আমিন খান গিনি বলেন, ‘সে দৃশ্য ভয়াবহ। চারদিকে
বিকট শব্দ। আকাশজুড়ে ধোয়ার কুন্ডলী। চোখে কোন হতাহত না দেখলেও আমাদের
আতংকের শেষ ছিল না। বাড়িতে মাঝেমধ্যে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে
যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আতংক আর হতাশা কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। তবু
ভরসা ছিল একদিন বাড়ি ফিরবোই’।
মনসুরুল আমিন খান আরও বলেন, শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি। বাংলাদেশ
সরকার, শিপিং কর্পোরেশন এবং সর্বোপরি রোমানিয়া দূতাবাসের আন্তরিক
চেষ্টায় আমরা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারায় সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন
জানাচ্ছি।
মনসুরুল আমিন খানের বাবা বিএডিসির সাবেক কর্মকর্তা নুরুল আমিন
খান ও মা মর্জিনা খানম ছেলেকে কাছে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে
পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তার স্ত্রী আশরুকা সুলতানা ও তিন সন্তান পুত্র
ফাহিমি, ফারহান এবং কনিষ্ঠ পুত্র ফারদিনের চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠলো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)