হেলিকপ্টারে চড়ে বরিশালে জার্মানি বউ

নিউজ ডেস্ক:

জার্মানির একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন ২৬ বছর বয়সী রাকিব হাসান শুভ। তার বাড়ি বরিশালে। চাকরির সুবাদে রাকিবের সঙ্গে জার্মানির এক তরুণীর পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেম। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ তারা বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মেয়ে পক্ষের অভিভাবক ও স্বজনরা। তবে প্রবাসের সেই বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি ছেলের স্বজনরা।

রাকিবের ইচ্ছে ছিল বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই নববধূকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরবেন। বাবা-মায়ের দোয়া নেবেন। বাড়িতে অনুষ্ঠান করে আত্মীয়-স্বজনদের আমন্ত্রণ করে খাওয়াবেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা।

করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলে দেশে আসার সিধান্ত নেন। এরই মধ্যে তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসে। জন্ম হয় ছেলে সন্তানের। নাতি দেখতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন দেশে থাকা দাদা-দাদি। অবশেষে জার্মানি বধূ ও ছয়মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে গতকাল শনিবার সকালে দেশে আসেন রাকিব হাসান।

এরপর ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে পৌঁছান চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা বাজার সংলগ্ন মাঠে। জার্মানি পুত্রবধূ ও ছয়মাসের নাতিকে বরণ করে নিতে সেখানে হাজির ছিলেন রাকিব হাসানের বাবা-মা ও স্বজনরা। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা-মা। তারা ছেলে ও ছেলের বউকে জড়িয়ে ধরেন। নাতি কোলে নিয়ে চুমু খান।

হেলিকপ্টারে করে জার্মানি বধূকে আনা হবে- এমন খবর আগেই প্রচার হয় এলাকায়। হেলিকপ্টার ও জার্মানি বউ দেখতে কাগাশুরা বাজার এলাকায় জড়ো হন কয়েকশ মানুষ।

হেলিকপ্টার থেকে তারা নেমে আসার পর ঘোড়ার গাড়িতে করে নেয়া হয় বাড়িতে। ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি আসার খুশিতে দুপুরে আয়োজন করা হয় প্রীতিভোজের। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ পাঁচ শতাধিক লোককে আমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়।

রাকিব হাসান বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের উলালবাটনা গ্রামের মো. শহীদুল ইসলামের ছেলে। ২০১১ সালে ইতালি যান রাকিব। পরবর্তীতে সেখান থেকে জার্মানিতে যান। সেখানে আলিশাহ নামে হাসপাতালের এক সেবিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। এরপর তারা বিয়ে করেন।

রাকিব হাসানের বাবা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ইতালি ছিলাম। ইতালি থাকাকালে ২০১১ সালে ছেলে রাকিবকে সেখানে নিয়ে যাই। পরবর্তীতে রাকিব সেখান থেকে জার্মানিতে যান। বর্তমানে রাকিব সেখানকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। জার্মানির এক তরুণীকে তার পছন্দ হয়। বিয়ের জন্য রাকিব সম্মতি চেয়েছিল। ভিডিও কলে দেখে আমাদেরও মেয়ে পছন্দ হয়। সম্মতি দেওয়ার পর রাকিব ও আলিশাহ বিয়ে করেন। তবে জার্মানি গিয়ে সে বিয়েতে আমাদের উপস্থিত থাকা সম্ভব ছিল না। বিয়ের পর রাকিব ও আলিশাহ’র বরিশালে আসার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে তারা আসতে পারেননি। এছাড়া দুজনই চাকরি করেন। কর্মস্থল থেকে ছুটি পাওয়ার বিষয় ছিল। তাদের আসতে বিলম্ব হচ্ছিল। এরই মধ্যে আমাদের নাতি জন্ম নেয়। নাতিকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিল। অবশেষে তারা এসেছেন। ছেলের বউয়ের সঙ্গে তার বান্ধবী জেনিও এসেছেন। নাতি-ছেলে ও ছেলের বউকে কাছে পাওয়ার আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।

মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ছেলের বিয়ে উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারিনি। তাই বাড়িতে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকার অনেকে এসেছেন। তারা ছেলের বউ ও নাতিকে দেখেছেন। দোয়া করেছেন। এছাড়া জার্মানি ছেলে বউকে দেখতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত শত শত মানুষ আসছেন। তাদের মিষ্টান্ন খাওয়ানো হচ্ছে। সবমিলিয়ে আজকের দিনটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জার্মান প্রবাসী রাকিব হাসান বলেন, করোনার কারণে জার্মানিতে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হয়েছে। আমি ও আলিশাহ অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এছাড়া আমাদের ছয় মাসের ছেলে ইলিয়াস হাসানকে দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন বাবা-মা। তারা ফোনে কথা বলার সময় আক্ষেপ করতেন। নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করার অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে তাদের আশা পূরণ হয়েছে।

রাকিব হাসান বলেন, আলিশাহ প্রথম বাংলাদেশে এসেছে। এখানে তার অনেক ভালো লাগছে বলে অনুভূতি প্রকাশ করেছে। সে আমাকে বলেছে, এখানকার পরিবেশ, অভ্যর্থনা তার খুব চমৎকার লেগেছে। তার অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)