২৪ বছর পর পাকিস্তানে টেস্ট খেলতে নামছে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্কঃ

অপরিচিত পরিবেশ, কড়া নিরাপত্তা এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মধ্যে ২৪ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবারের মত টেস্ট খেলতে নামছে অ্যাশেজ জয়ী অস্ট্রেলিয়া।

মাত্র তিন দিন আগে ইসলামাবাদে পা রাখার পর ‘রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের নিরাপত্তা’র চাদরে চলে যায় পুরো অস্ট্রেলিয়া দল। প্রথম টেস্টের ভেন্যু রাওয়ালপিন্ডির কন্ডিশনের  সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব কম সময় পেয়েছে পাকিস্তান।

তবে সফরকারী দলের অনুশীলন দেখে স্বাগতিকদের খুশির বিষয় হতে পারে পাকিস্তানে  স্পিনের তুলনায় পেস সহায়ক উইকেটে অসি দেলর অনুশীলন।

২০১৯ সালে লাহোরে শ্রীলংকা দল বহনকারী বাসে জঙ্গী হামলার দশ বছর পর রাওয়ালপিন্ডিতে তৃতীয় টেস্টে খেলার অনুমতি দেয়া হয়। এই ভেন্যুতে এর আগে  অনুষ্ঠিত দুই ম্যাচে পেসাররা ৫২ উইকেট এবং স্পিনাররা মাত্র ২১টি উইকেট নিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল প্যাট কামিন্স। তার নেতৃত্বে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে হারায় অজিরা। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট  দলের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে বলে স্বীকার  করেছেন কামিন্স।

তিনি বলেন, আপনি বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় এবং কন্ডিশন জানেন। কিন্তু এই সিরিজটি সম্ভবত স্বাভাবিকের চেয়ে আরও অনেক কিছুই অজানা, তাই এটি বেশ আকর্ষণীয় এবং চ্যালেঞ্জিং হবে।

কামিন্স বলেন, নিজেদের খেলা সম্পর্কে  আমার  আত্মবিশ্বাস রয়েছে। আমরা অ্যাশেজ থেকে আমরা দুর্দান্ত ফর্মে আছি তাই প্রতিপক্ষকে নিয়ে না ভেবে, বরং আত্মবিশ্বাসের প্রতি অবিচল তাকিতে হবে।

পাকিস্তানের কিছু খেলোয়াড় আছেন এর আগে যাদের মুখোমুখি হতে হয়নি অস্ট্রেলিয়ানদের।

লেগ-স্পিনার ইয়াসির শাহ এবং পেসার মোহাম্মদ আব্বাসের পরিবর্তে দলে এসেছেন স্পিনার নোমান আলি এবং সাজিদ খান। ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের ১-০ ব্যবধানে সিরিজ  জয়ে অবদান রেখেছিলেন ইয়াসির- আব্বাস।

কামিন্স বলেন, আমি মনে করি পাকিস্তান দলের গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয় হচ্ছে- তাদের কিছু তরুণ আছে যারা খেলতে নেমেই জ¦লে উঠে। তাই এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ।

২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ড সফরের পর বিদেশের মাটিতে কোন টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম একটি অভিজ্ঞ দল রয়েছে তাদের।

ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভ স্মিথ মিলে ১৭৩ টেস্টে ১৫,৩৬৮ রান করেছেন, যা পাকিস্তানের শীর্ষ সাত ব্যাটারের চেয়েও ১৩,১২০ রান বেশি।

অ্যাশেজে সেঞ্চুরি  করা তাদের দুই শীর্ষ স্থানীয় টেস্ট ব্যাটার র্মানাস লাবুশেন এবং পাকিস্তানে জন্ম নেয়া উসমান খাজা এবং ট্রাভিস হেড দারুন ফর্মে রয়েছেন।

বাঁ-হাতি মিচেল স্টার্ক এবং জশ হ্যাজেলউডকে নিয়ে গড়া বিশ্বমানের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেন কামিন্স।

দলের সেরা স্পিনার অফ-স্পিনার নাথান লায়ন অ্যাশেজে  ক্যারিয়ারের ৪০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। যার মধ্যে এশিয়াতেই  ৯৫টি উইকেট আছে তার।

পাকিস্তানের ব্যাটিং অনেকটাই নির্ভর করবে অভিজ্ঞ আজহার আলি, অধিনায়ক  বাবর আজম এবং ফর্মে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ানের উপর।
তবে শান মাসুদ বা ইমাম-উল-হকের সঙ্গে দু’টি টেস্ট খেলা আবদুল্লাহ শফিকের ওপেনিং জুটি দুর্বল বলে ধারনা করা হচ্ছে।

টেস্ট শুরুর আগেই ধাক্কা এসেছে পাকিস্তান শিবিরে। পেসার হাসান আলি এবং পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ জুটিকে মিস করবে পাকিস্তান। এরমধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন আরেক পেসার হারিস রউফ।

রউফের পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছেন তরুণ সেনসেশন নাসিম শাহ। দুই বছর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ভেন্যুতেই ১৬ বছর ৩৫৯ দিন বয়সে হ্যাটট্রিক করা সর্বকনিষ্ঠ বোলার হয়েছিলেন তিনি। শাহিন শাহ আফ্রিদির সঙ্গে নতুন বলের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায়  মাঠে ফিরছে দর্শক। স্বাগতিকদের সমর্থন যোগাতে  পুরো গ্যালিারিই থাকবে পরিপূর্ণ। ইতোমধ্যেই  প্রথম তিন দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

কামিন্স বলেন, ২০ বছরের মধ্যে এটি দুই দেশের মধ্যে প্রথম টেস্ট তাই হতে যাচ্ছে এটি একটি বিশেষ মুহূর্ত।  এই বিশেষ মুহুর্তের অংশ হতে পেরে  আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি।  আশা করছি মাঠে উপস্থিত থেকে  দর্শকরা  আরো অনুপ্রেরণা যোগাবে।

১২ মার্চ থেকে করাচিতে দ্বিতীয় টেস্ট এবং ২১ মার্চ থেকে লাহোরে শুরু হবে তৃতীয় টেস্ট।

পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, আব্দুল্লাহ শফিক, আজহার আলী, ফাওয়াদ আলম, হারিস রউফ, ইমাম উল হক, মোহাম্মদ নওয়াজ, নোমান আলী, সাজিদ খান, ইফতেখার আহমেদ, নাসিম শাহ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, সৌদ শাকিল, শাহীন শাহ আফ্রিদি, শান মাসুদ ও জাহিদ মাহমুদ।

রিজার্ভ : কামরান গুলাম, মোহাম্মদ আব্বাস, সরফরাজ আহমেদ, ইয়াসির শাহ।

অস্ট্রেলিয়া দল : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), অ্যাস্টন আগার, স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিন, মার্কাস হ্যারিস, জস হ্যাজেলউড, ট্রাভিস হেড, জস ইংলিস, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, নাথান লিঁও, মিচেল মার্শ, মাইকেল নেসার, স্টিভ স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মিচেল সোয়েপসন ও ডেভিড ওয়ার্নার।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)