ঝিনাইদহে তালাকে স্বামীদের চেয়ে এগিয়ে স্ত্রীরা

অনলাইন ডেক্স:

ঝিনাইদহের কাঞ্চননগর পাড়ার সামিহা আক্তার (ছদ্ম নাম)। ২০১৮ সালে বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের উপ-শহরপাড়ার সাবিতকে। মাত্র এক মাস সংসার করার পর বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আর স্বামীর ঘরে ফেরেনি সামিহা। দুই মাস পর তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেন। নোটিশে উল্লেখ করেন স্বামী কৃর্তক শারীরিক নির্যাতন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচার।

শুধু সামিহা নয়, ঝিনাইদহে প্রতিদিন বিচ্ছেদের ঘটনায় ভারি হচ্ছে নিকাহ রেজিস্ট্রারের রেকর্ড। তুচ্ছ ঘটনায় স্ত্রী স্বামীকে ও স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন। তবে বিচ্ছেদে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। বিচ্ছেদের আশঙ্কাজনক এ হার পরিণত হয়েছে সামাজিক ব্যাধিতে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, ঠুনকো অজুহাতে নিমিষেই ভেঙে যাচ্ছে দুই যুগের সংসার।

ঝিনাইদহ জেলা নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ঝিনাইদহে ৯ হাজার ৭৭৮টি তালাক হয়েছে। যার মাসিক গড় ২৭১। পরিসংখ্যান বলছে, বিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে রয়েছে।

২০১৯ সালে বি (ছেলে কর্তৃক) তালাকের সংখ্যা ছিল ২৭৮, সি (উভয় পক্ষ) তালাক ১৪৫৬ ও ডি (মেয়ে কর্তৃক) তালাকের সংখ্যা ছিল ১৩৩০। ঐ বছর জেলায় বিয়ে হয় ৭ হাজার ৮৪২টি। যার বিপরীতে তালাক হয় ৩০৬৪টি। ২০২০ সালে বি (ছেলে) তালাকের সংখ্যা ছিল ২৩২, সি (উভয় পক্ষ) তালাক ১৩৫৫ ও ডি (মেয়ে কর্তৃক) তালাকের সংখ্যা ছিল ১১৪৩। ঐ বছর বিয়ে হয় ৬ হাজার ৮৯৫টি। যার বিপরীতে তালাক হয় ২৭৩০টি। ২০২১ সালে বি (ছেলে) তালাকের সংখ্যা ছিল ৩৮৪, সি (উভয় পক্ষ) তালাক ১৭৪৬ ও ডি (মেয়ে কর্তৃক) তালাকের সংখ্যা ছিল ১৮৫৪। ঐ বছর ৯ হাজার ৪৬টি বিয়ের বিপরীতে তালাক হয়েছে ৩৯৮৪ জনের।

জেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবাইদুর রহমান জানান, করোনাকালে জেলায় তালাকের সংখ্যা কম নয়। বিয়ে বৃদ্ধি না পেলেও তালাক হচ্ছে অহরহ।

ঝিনাইদহ পৌর কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর জানান, করোনাকালে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বিয়ে হয় ৩৯১টি। আর তালাক হয়েছে ১৬৯টি। যার মাসিক গড় ২৮। জেলার ৬টি পৌরসভা, মানবাধিকার সংগঠন, মহিলা বিষয়ক অফিস, মহিলা সংস্থা ও জেলা জজ আদালতের লিগ্যাল এইড অফিসে প্রতিদিন তালাকের আবেদন জমা পড়ছে।

ঝিনাইদহ পৌরসভা থেকে পাওয়া তালাক নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তালাকে ঘুরে ফিরে একই কারণ দেখিয়েছেন আবেদনকারীরা। আবেদনগুলোতে কারণ হিসেবে বেশিরভাগই ছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া, ভরণ-পোষণ না দেওয়া, স্বামীর সন্দেহপ্রবণ মনোভাব, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে, কাবিন না হওয়া, মাদকাসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, স্ত্রীর ওপর নির্যাতন, যৌতুক, মানসিক পীড়ন, পরকীয়া, আর্থিক সমস্যা, ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত। অন্যদিকে স্বামীরা তাদের নোটিশে উল্লেখ করেছেন, পরকীয়া, আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়া, বেপরোয়া জীবনযাপন, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়া, অবাধ্য হওয়া, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমে অবাধ বিচরণ, ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী না চলাসহ বিভিন্ন কারণ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)