দেবহাটায় বৃদ্ধার রহস্যজনক মৃত্যু! তড়িঘড়ি দাফনের চেষ্টা, মরদেহ ময়নাতদন্তে প্রেরণ

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেবহাটায় রোকেয়া খাতুন (৭৭) নামের এক বৃদ্ধার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের জোয়ার গুচ্ছগ্রামের মৃত হাসান আলী তালুকদারের স্ত্রী। স্ট্রোকজণিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার দিয়ে সোমবার দুপুরে তার মরদেহ তড়িঘড়ি করে দাফনের চেষ্টা করে পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে দেবহাটা থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। মরদেহটি উদ্ধারকালে ওই বৃদ্ধার গলায় ফাঁস দেয়ার চিহ্ন এবং মাথার বামপাশে গভীর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বলে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। এরআগে সকাল ১০টার দিকে মৃতবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন। পরে হাসপাতাল থেকে মরদেহটি তড়িঘড়ি করে বাড়িতে নিয়ে দাফনের চেষ্টা করে স্বজনরা। তবে হাসপাতালে নেয়ার অন্তত একঘন্টা আগে রোকেয়া খাতুনের মৃত্যু হয় বলে জানান স্থানীয়রা। অথচ মৃত্যুর ঘন্টাখানেক পর পুলিশকে না জানিয়ে স্বজনদের পক্ষ থেকে রোকেয়া খাতুনের মরদেহ লোক দেখানো হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মুখে উঠে এসেছে নানা গুঞ্জন। এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টাকালে রোকেয়া খাতুনের মৃত্যু হয়েছে, নাকি তার নামে থাকা সাতক্ষীরা পোষ্ট অফিসের ডিপোজিটের ৭ লাখ টাকার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়েও এলাকাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অন্যদিকে প্রথমে স্ট্রোকজণিত কারণে রোকেয়া খাতুনের মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার দেয়া হলেও, পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়ার পর ওড়না ছিড়ে মেঝেতে পড়ে গিয়ে রোকেয়া খাতুনের মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ এবং মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় তার পরিবারের লোকজন।
রোকেয়া খাতুনের প্রতিবেশীরা জানায়, সাতক্ষীরা পোস্ট অফিসে রোকেয়া খাতুনের নামে সাত লক্ষ টাকার ডিপোজিট এবং বসত ভিটার কিছু জমি রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে ওই টাকা এবং জমির দলিলের জন্য তার ছোট ছেলে মাহমুদ কাদের এবং তার স্ত্রী-সন্তান মিলে রোকেয়া খাতুনকে অবজ্ঞা-অবহেলা ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। এনিয়ে বড় ছেলে টিএনটি’র অফিসার আব্দুল হাকিমের সাথেও ছোট ছেলে মাহমুদ কাদেরের পরিবারের গোলযোগ চলে আসছিল। গত দু’বছরে এনিয়ে রোকেয়া খাতুন একাধিকবার থানায় অভিযোগ দিলে বসাবসি ও শালিসের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে মিমাংসা করে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে বড়ছেলের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া এবং তার নামীয় জমিতে ছোট ছেলের ঘরের সাথে লাগোয়া নিজের ব্যাক্তিগত ঘরে রাত্রিযাপন করতেন তাদের বৃদ্ধা মা রোকেয়া খাতুন। প্রতিবেশীরা আরোও জানায়, সোমবার ফজরের নামাজ পড়ে বড় ছেলের ঘরে যান রোকেয়া খাতুন। জমির দলিলে জন্য সারারাত ছোট ছেলে মাহমুদ কাদের ও তার স্ত্রী-সন্তান মিলে তাকে গালিগালাজ ও মানসিক নির্যাতন করেছে বলে সেসময় বড়ছেলে আব্দুল হাকিমকে জানান তিনি। পরে বড়ছেলের সাথে কথা বলে আবারও নিজের ঘরে চলে যান তিনি। সকাল ১০টার দিকে রোকেয়া খাতুনকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেন তারা। পরে প্রাথমিকভাবে পরিবারের লোকজনের মুখে স্ট্রোকজণিত কারনে রোকেয়ার মৃত্যুর বিষয়টি শুনলেও, পরে জানতে পারেন মৃত্যুর এসব তথ্য। এদিকে মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালানো হয় উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানায়, রোকেয়া খাতুনের মাথা ফেটে তার ঘরের মেঝেতে যতো রক্ত পড়েছিল, তা সকলের অগোচরে পরিষ্কার করে ফেলে পরিবারের লোকজন। যে ওড়নাটি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়া হয়েছিল সেই ওড়নাটিও লুকিয়ে রাখা হয়েছিল যাতে কেউ বুঝতে না পারে কিভাবে মৃত্যু হয়েছে রোকেয়া খাতুনের। এমনকি তড়িঘড়ি করে গোসল দিয়ে তার মরদেহ দাফনের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ডিপোজিটের টাকা ও জমির দলিল নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে গোলযোগ ছিল। কিছুদিন আগে রোকেয়া খাতুন এনিয়ে থানায় অভিযোগ করলে তাদের মা-ছেলের মধ্যে মিমাংসা করিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে পুলিশ মাঝেমধ্যেই রোকেয়া খাতুনের খোঁজখবর নিয়ে আসছিল। আকর্ষিক তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)