প্রথম দেখায় ২ ঘণ্টা ধর্ষণ, হত্যার পর লাশের সঙ্গেও বিকৃত যৌনাচার

পরিচয় মাত্র তিনদিনের। এর মধ্যেই দেন দেখা করার প্রস্তাব। মেয়েটিও সরল মনে সাড়া দেন। ছেলের দেওয়া সময়ে চলে আসেন নির্দিষ্ট স্থানে। কিন্তু ছেলেটির মনে নাড়া দেয় কুচিন্তা। রাত ৯টার দিকে মেয়েটিকে নিয়ে ওঠেন নিজ বাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন আরেক বন্ধু। মেয়েটি তখনো বিশ্বাসে অটুট ছিলেন। তবে ঘরে নিতেই ভয়ংকর হয়ে ওঠেন তিনদিন আগে পরিচয় হওয়া ছেলেটি। বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে মেয়েটির ধর্ষণ করেন ছেলেটি।

এখানেই শেষ নয়, প্রতারণা বুঝতে পেরে মেয়েটি তাদের হাতে-পায়েও ধরেন। কিন্তু ছাড় পাননি। ধর্ষণ শেষে উল্টো মেয়েটিকে বানানো হয় লাশ। এতেও ক্ষান্ত হননি বিকৃত যৌন চাহিদার ছেলে দুটি। হত্যার পরও মেয়েটির ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। ধরা খাবে ভেবে মেয়েটির মাথা কেটে বিবস্ত্র করে ফেলে রাখা হয়।

এভাবেই গা শিউরে ওঠা বর্ণনা দিয়েছেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার উত্তরডিহি এলাকা থেকে তরুণীর মাথাবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার রিয়াজ। এ ঘটনায় তার বন্ধু সোহেলকেও গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে, শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ফুলতলার যুগ্নিপাশার নির্মাণাধীন ভবনের বাথরুম থেকে তরুণীর মাথাটি উদ্ধার করে র‌্যাব। র‌্যাব-৬ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদের নেতৃত্বে এ উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। পরে ঘটনাস্থলেই প্রেস ব্রিফিং করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব পরিচালক বলেন, তরুণীর মাথাবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধারের পর জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে র‌্যাব। বিরতিহীন কাজ করে শুক্রবার ফরিদপুর থেকে রিয়াজকে ও ফুলতলা থেকে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটিও। তারা দুজনই হীন চরিত্রের অধিকারী।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াজ জানান, এর আগেও প্রতারণার মাধ্যমে অনেক মেয়ের সম্ভ্রম নষ্ট করেছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডের তিনদিন আগে তার সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয় হয়। এরপর দেখা করার আবদার করেন। এজন্য সোহেলকে সঙ্গে রাখেন তিনি।

রাত ৯টার দিকে ওই তরুণীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দুজনে মিলে ধর্ষণ করেন। দুই ঘণ্টা ধরে ঘরে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে প্রতারণা বুঝতে পেরে বারবার তাদের হাতে-পায়ে ধরেন ওই তরুণী।

আকুতি জানিয়ে ওই তরুণী বলেন, ‘তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, আমি কাউকে কিছু বলব না। আমার বাবা অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমি সেখানে যাব’।

তবে মেয়েটিকে ছেড়ে দিলে নিজেরা রক্ষা পাবেন না- এমন চিন্তা মাথায় আসে রিয়াজ ও সোহেলের। তবে ওই তরুণীকে ছেড়ে দেবেন বলে রাস্তার দিকে নিয়ে যান। কিন্তু পথে পেছন থেকে তরুণীর গলা চেপে ধরলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন রিয়াজ ও সোহেল। হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ওই তরুণীকে গাছের সঙ্গে বাঁধার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তারা।

এরপর তরুণীর লাশ কাঁধে নিয়ে ফুলতলার যুগ্নিপাশার নির্মাণাধীন ভবনে যান রিয়াজ ও সোহেল। এর মধ্যেই ফের দুজনের মনে কুচিন্তা জাগে। এরপর লাশ বিবস্ত্র করে ফের ধষর্ণ করেন তারা। পরে বাড়ি থেকে বটি নিয়ে তরুণীর মাথা কেটে ফেলেন রিয়াজ। একই সঙ্গে মাথা ঢেকে সেই ভবনের বাথরুমে লুকিয়ে রাখেন। এরপর নিজের মতো করে যে যার বাড়ি চলে যান।

২৬ জানুয়ারি সকালে ফুলতলার উত্তরডিহি এলাকার ধানক্ষেত থেকে ওই তরুণীর মাথাবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই সময় তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে লাশের আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ২৭ জানুয়ারি তাকে দাফন করা হয়।

নিহতের বোন জানান, এ ঘটনায় অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। পরিচয়ের সুবাদে মুঠোফোনে তার বোনকে ডেকে নেয়া হয়। রাত ৮টার দিকে তার বোন বাড়ি থেকে বের হন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)