স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখুন: ইউনিসেফ
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব দেশের সরকারকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিশুদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ।
শুক্রবার ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক বিবৃতিতে এ আহবান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯-এর ওমিক্রন ধরনটি সারা বিশ্বে যখন ছড়িয়ে পড়ছে, এটি যাতে শিশুদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।
ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক প্রধান রবার্ট জেনকিন্স বলেন, বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিঘ্নের দুই বছর পূর্ণ হবে আগামী মার্চে। খুব সহজভাবে বললে, আমরা শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রায় অপূরণীয় মাত্রার ক্ষতি প্রত্যক্ষ করছি।
তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটাতে হবে এবং শুধু স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়াই এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের নিবিড় সহায়তা প্রয়োজন। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, সামাজিক বিকাশ এবং পুষ্টি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে স্কুলগুলোকে শুধু শেখানোর নির্ধারিত গণ্ডির বাইরেও যেতে হবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ করতে হলে তা অবশ্যই শেষ অবলম্বন হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে করতে হবে। সংক্রমণের ঢেউ সামাল দিতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি তার মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে সবার শেষে এবং খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে স্কুল থাকা উচিত।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্কুল পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে ৬১ কোটি ৬০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহামারির কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হলেও সরকার নতুন করে ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিপর্যয় এড়াতে এবং শিশুদের তাদের শেখার পথে ফিরিয়ে আনতে ইউনিসেফ কিছু সুপারিশও করেছে। সেগুলো হলো,
প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী ও উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯-এর টিকাদানের পরপরই এ টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও স্কুলকর্মীদের সম্পূর্ণরূপে সমর্থন ও অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।
স্কুল খোলা রাখুন। স্কুলগুলো পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত। কোভিড-১৯ ঝুঁকি প্রশমনের ব্যবস্থাগুলোই স্কুলগুলোকে খোলা রাখতে সাহায্য করে। ডিজিটাল সংযুক্তির পেছনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই কোনো শিশু পেছনে পড়ে থাকবে না।
প্রতিটি শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এরমধ্যে রয়েছে প্রতিটি কমিউনিটির প্রান্তিক শিশুদের ওপর বিশেষ লক্ষ্য রেখে কিছু বিষয়ে বিস্তৃত সহায়তা প্রদান করা। যেমন- শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া, মানসিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসহায়তা, সুরক্ষা ও অন্যান্য পরিষেবা প্রদান।
অগ্রাধিকারপ্রাপ্য জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি সুরক্ষিত করার পর এবং টিকার যথেষ্ট প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে ইউনিসেফ শিশুদের টিকাদানকে সমর্থন করে। সশরীরে স্কুলে যাওয়ার জন্য টিকাদানকে পূর্বশর্ত করবেন না। কোভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সশরীরে স্কুলে যাওয়ার শর্তারোপ করলে তা শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউনিসেফ শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের টিকাদান ছাড়াই স্কুলগুলো খোলা রাখার এবং কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কৌশল যাতে পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনের অন্যান্য দিকে শিশুদের অংশগ্রহণকে সহজতর করে, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করে।